সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
"তুমি কতবড় নেতা হয়ে গেছো। যে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ছ?" কালীঘাটে বীরভূম জেলা নিয়ে বৈঠকে বীরভূমের জেলা সভাধিপতি কাজল শেখকে জোর ধমক দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন কি, লোকসভা নির্বাচনের জন্য বীরভূম জেলার জন্য যে নতুন কোর কমিটি এ দিন তৈরি করা হয়েছে, তাতেও ঠাঁই হয়নি কাজলের। বরং সেখানেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে অনুব্রতপন্থীদেরই।
কাজল শেখ অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী দলের নেতা বলেই পরিচিত ছিলেন। তবু অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতারের পর তাঁকেই বীরভূমের সংগঠনের হাল ধরার দায়িত্ব দিয়েছিল দল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর করা হয়েছিল জেলা সভাধিপতিও। যদিও বীরভূমের আর এক দাপুটে নেতা কাজল শেখের ঔদ্ধত্য এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে দলের নেতাদের একাংশই তাঁর উপরে বিরক্ত ছিলেন।
সাধারণ মানুষের থেকেও অভিযোগ আসছিল দলীয় নেতৃত্বের কানে।
গত মাসে পৌষ মেলার আয়োজন নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক। দলের বিরোধী শিবিরের এক নেতার পাশে বসা নিয়ে সেই বৈঠক ছেড়ে মাঝপথেই বেরিয়ে যান কাজল শেখ। সূত্রের খবর, কাজলের এই আচরণে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, গোটা বীরভূম জেলা থেকেই কাজল শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। এ দিন কার্যত কাজল শেখের ডানা ছেঁটে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজলকে সতর্ক করে এ দিন তৃণমূলনেত্রী আরও বলেন, 'দল তোমাকে জেলা সভাধিপতির দায়িত্ব দিয়েছে। আবার সেই দায়িত্ব থেকে সরাতেও পারে। মনে রেখো তুমি জেলা পরিষদের সভাধিপতি। গোটা বীরভুম জেলা দাপিয়ে বেড়ানোর দরকার নেই। আপাতত তোমাকে নতুন কোর কমিটিতে জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। পরে প্রয়োজনে ডেকে নেওয়া হতে পারে।'
এ দিনের বৈঠকে বার বারই জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলের প্রশংসা করেন তৃণমূলনেত্রী। অনুব্রত জেলে থাকলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ পাঁচ নেতাকে নিয়েই কোর কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা। কাজল শেখকে শুধুমাত্র তাঁর নিজের এলাকা নানুর এবং কেতুগ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুব্রতকে রাজনৈতিক কারণেই আটকে রাখা হয়েছে বলে এ দিনের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা।
নতুন যে পাঁচ সদস্যের কোর কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন সুদীপ্ত ঘোষ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিত্ সিনহা, বিকাশ রায়চৌধুরী এবং চন্দ্রনাথ সিনহা। বীরভূম জেলার দুটি লোকসভা আসনের মধ্যে এগারোটি বিধানসভা রয়েছে। বীরভূম জেলার বেশ কয়েকজন নেতাকে বিধানসভা ধরে ধরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, কোর কমিটিতেও যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অভিজিত্ সিনহাকে লাভপুর এবং সাঁইথিয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রনাথ সিনহা দেখবেন বোলপুর, নলহাটি, মুরারই। চন্দ্রনাথ সিনহা এবং অভিজিত্ সিনহাকে যৌথভাবে ময়ূরেশ্বর বিধানসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্বে থাকবে রামপুরহাট এবং হাসন বিধানসভা কেন্দ্র। কাজল শেখের দায়িত্বে থাকবে নানুর এবং কেতুগ্রাম। সুদীপ্ত ঘোষ দেখবেন দুবরাজপুর, বিকাশ রায় চৌধুরীকে সিউড়ির পাশাপাশি দুবরাজপুরেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ও বৈঠক শেষে বলেন, কোর কমিটিতে যখন যখন যাঁকে দরকার হবে, ডেকে নেওয়া হবে। অনুব্রত মণ্ডল যে সাংগঠনিক দায়িত্ব দলের জন্য পালন করেছেন, আমরা কেউই তা অস্বীকার করতে পারিনা। দিদি বলেছেন, অনুব্রত মণ্ডলকে বেশি দিন আটকে রাখা যাবে না। উনি ছাড়া পাবেন না এমনও নয়। উনি ফিরে এলেই ওনার সব সাংগঠনিক দায়িত্ব ফিরে পাবেন।