সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আর জি কর-কাণ্ডের ১৬২ দিন পর রায় দিল শিয়ালদা আদালত। বিচারক অনির্বাণ দাস ধৃত সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করলেন।
আর জি কর মেডিক্যালে ধর্ষণ-খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়। চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুন দোষী সাব্যস্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়। সোমবার সাজা ঘোষণা হবে এই মামলায়। সঞ্জয়ের ফাঁসি হওয়া উচিত বলে আগেই আদালতে সওয়াল করেছিল CBI. শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস আজ সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত ঘোষণা করলেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI সঞ্জয়ের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দিয়েছিল। হয় ফাঁসি, নয়ত যাবজ্জীবন সাজা হবে বলে জানিয়েছে আদালত। (RG Kar Verdict)
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার তিনটি ধারায় সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে,। ৬৪ নং ধারায়, মৃত্যুর জন্য় দায়ী, ৬৬ ধারায় ধর্ষণের শাস্তি এবং ১০৩ নং ধারায় খুনের ধারায় চার্জগঠন করা হয়েছিল। আজও আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে সঞ্জয়। সে বলে, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি কিছু করিনি।” এর পাল্টা বিচারক অনির্বাণ দাস বলেন, “CBI যা প্রমাণ দিয়েছে। তাতে আপনিই দোষী। শাস্তি পেতেই হবে।”
ফের সঞ্জয় বলে, “আমার কথা শুনুন প্লিজ। আমি কিছু করিনি। আমাকে আইপিএস-রা যা বলেছেন, তাই বলেছি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা রয়েছে। আমি ধর্ষণ করলে সেটা ছিঁড়ল না কেন?” এতে বিচারক বলেন, “সোমবার আপনার কথা শুনব।” আগেও আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে সঞ্জয়।
আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় প্রথমে কলকাতা পুলিশ সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে CBI মামলা হাতে পায়। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বলা হয়, সঞ্জয় একাই তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করে। CBi-এর দেওয়া তথ্যপ্রমাণে সন্তুষ্ট বলে জানান বিচারক। (Sanjay Roy Convicted)
CBI জানায়, ঘটনার রাতের সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয়কে সেমিনার রুমে ঢুকতে এবং দেখা গিয়েছে। তার মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশনও হাসপাতাল ছিল। ফরেন্সিক রিপোর্টে সঞ্জয়ের হাতের আঙুলের নখ এবং নিহত তরুণীর দেহাংশ থেকে প্রাপ্ত নমুনার সঙ্গে সঞ্জয়ের নমুনা মিলে যায়।
তবে সঞ্জয় ছাড়া আর কেউ কি ঘটনায় যুক্ত ছিল? এই প্রশ্ন আজও রয়েছে। নির্যাতিতার পরিবার সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছে সেই নিয়ে। কিন্তু খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় CBI একা সঞ্জয়কেই অভিযুক্ত ঠাহর করে। আদালতও সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ারপ পরই যেন রায় দেওয়া হয় বলে আবেদন জানায় নির্যাতিতার পরিবার। কিন্তু শিয়ালদা আদালত জানায়, সুপ্রিম কোর্ট কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। হাইকোর্ট আবার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই মামলায় রায়দান করা হচ্ছে।
আর জি কর মামলার রায়ের জন্য আজ কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় শিয়ালদা কোর্ট চত্বর। পুলিশে ছয়লাপ হয়ে যায় গোটা এলাকা। রাস্তা থেকেই তৈরি করা হয় ব্যারিকেড। সাধারণের প্রবেশ নিষেধ করা হয়। দুপুর ১টা নাগাদ সেখানে পুলিশের ভ্য়ানে চাপিয়ে সঞ্জয়কে আনা হয়। এর পর দুপুর ২.৩০টে নাগাদ রায় দেয় আদালত।
গত ৯ অগাস্ট তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। ১০ অগাস্ট ধর্ষণ-খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে।