সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই এবারে দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল।
দ্বিতীয় বর্ষের এক মেডিক্যাল ছাত্রীকে “Durgapur medical student gang rape”–র অভিযুক্ত। গত শুক্রবার রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার ধরন ও প্রেক্ষাপট দ্রুত রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে ওই ছাত্রী ও তার পুরুষ সঙ্গী কলেজের বাইরে বের হন। অভিযোগ, তাদের উত্যক্ত করে দুষ্কৃতিরা। মোবাইল, টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং পুরুষ সঙ্গীর ওপর হুমকি দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, প্রথমে সঙ্গী পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, নার্সিং ছাত্রীকে জঙ্গলের একটি জায়গায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
অপর দিকে, অভিযুক্ত পুরুষ সঙ্গী অভিযোগ করেন—নিজেই হাসপাতালে সঙ্গীকে ভর্তি করেছেন। তবে পুলিশ সে দাবি যাচাই করতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই চলেছে।
ঘটনার পরই ‘নির্যাতিতা’র বয়ান হাসপাতালে নথিভুক্ত করা হয় এবং আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়। ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত জানিয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল — তাই তদন্তে দ্রুততা ও সতর্কতা একইসাথে বজায় রাখা হচ্ছে।
শনিবার সকালেই ওড়িশা থেকে দুর্গাপুরে আসেন নির্যাতিতার বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে এখানে নিরাপদ নয়। দোষীদের দ্রুত ও কঠোর শাস্তি চাই।” পুলিশ তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, অভিযোগ পেশ করা হয়েছে এবং দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।
এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কলেজের প্রশাসনও স্তব্ধ। রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতর থেকে ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। জেলা ও রাজ্য প্রশাসনকে অবহিত করার পাশাপাশি, কলেজকেও ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এই ঘটনার খোঁজ পেতেই, রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাকে হাতিয়ার করছেন। বিজেপি নেতারা রাজ্য সরকারের কার্যপ্রণালীকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। রাজ্য সরকার মুখে বলছে—“এখানে রাজনীতির স্থান নেই, এটি সামাজিক অবক্ষয়” — পাশাপাশি দাবি করা হচ্ছে, প্রশাসন মূল কাণ্ডের সন্ধানে রয়েছে।
জাতীয় মহিলা কমিশন থেকে অর্চনা মজুমদার শোভাপুরে পৌঁছে ছাত্র-ছাত্রী ও প্রশাসন সঙ্গে কথা বলেন। কমিশন দাবি করেছে, নির্যাতিতাকে যথাযথ মানসিক ও চিকিৎসাগত সহায়তা পাশাপাশি সুরক্ষা দেওয়া হবে।
বর্তমানে অভিযোগ আনা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। তবে দ্রুত ধাপ হলো — অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা, সাক্ষ্য ও চিকিৎসা প্রতিবেদন সংগ্রহ করা, এবং ঘটনার স্থান-পরিস্থিতি নির্ধারণ করা।
আইনে ধর্ষণ বিষয়ক ধারাসমূহ প্রয়োগ হবে। যদি প্রমাণিত হয়, দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর শাস্তির দিকেও এগোনো হবে। এছাড়া, মেডিক্যাল কলেজ ও প্রশাসনও দায়িত্ব এড়িয়ে যাবে না।

এই ঘটনা একটি ভয়াবহ সতর্কবার্তা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সফল? কীভাবে শিক্ষার্থীদের রাতে নিরাপদভাবে চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব?
ছাত্রী, পরিবার ও সমাজ—সব পক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকা নজরদারি, সিসিটিভি, সিকিউরিটি গার্ড বৃদ্ধি।
— পুলিশ ও প্রশাসন: দ্রুত তল্লাশি, অভিযোগ মেনে নেয়া এবং মেয়েদের প্রতি সহানুভূতিশীল তদন্ত।
— সমাজ ও রাষ্ট্র: মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধা, পুরুষদের মাঝে নৈতিক শিক্ষা ও নারী নিরাপত্তার প্রতি সম্মান।
“Durgapur medical student gang rape”–র অভিযোগ শুধু একটি ঘটনার সংবাদ নয় — তা সমাজের অন্ধকার পাশকে গলাধাক্কা দিচ্ছে।
দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপ না হলে, এই ধরনের ঘটনায় মানসিক ক্ষত ও ভয় সামাজিক স্তরে ছড়িয়ে পড়বে।
আমরা সকলে প্রত্যাশা করি— এই মামলার ন্যায়বিচার হবে, দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে এবং ভবিষ্যতে এমন ভয়াবহ ঘটনায় আমরা আর কখনো সমাজে মুখোমুখি হব না।