সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
পয়লা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে দিনটি নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। যে উৎসবে ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও অংশ নিয়ে থাকে। এটি বাঙালির একটি সর্বজনীন লোকউৎসব। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ সালের পয়লা বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমি নতুন নিয়ম চালু করে। সেই থেকে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২.০০টায় দিন গণনা শুরু হয়। দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত।
বিক্রয়ের উৎস হিসেবে উদযাপিত হতো এসব মেলা। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ সারা বছরের প্রয়োজনীয় উপকরণ বৈশাখী মেলা থেকেই কিনত। গ্রামীণ অর্থনীতিতে তখন মেলার প্রভাব ছিল ব্যাপক। সেই মেলায় বিভিন্ন দ্রব্যাদি বিশেষ করে হাতের তৈরি কুটির শিল্পের নানা জিনিস যেমন— চেয়ার, টেবিল, চৌপায়া, ব্যালন, পিঁড়ি, রেহেল, লাঠি, ইঁদুর ধরার ফাঁদ, কুলা, নারকেল কোরানি, গাঁইল, চেগাইট, খড়ম, বাঁশের বাঁশি, পাউডি, ডাল ঘুটনি, ঘুড়ির নাটাই, পাটের শিকা, তালপাতার পাখা, সোলার পাখি, ঝিনুকের ঝাড়, মাটির তৈরি পুতুল, পুঁতিরমালা, হাতি-ঘোড়া-বাঘ-সিংহ, মুড়ি, ম্লা, মিঠাই, জিলাপি, বাতাসা, তিলের খাজা, তেজপাতা সহ শত ধরনের অদ্ভুতসব সুন্দর জিনিসের সমাবেশ ঘটত। এককথায়, শিল্পের এক বিশাল সমাবেশ ঘটত এসব মেলায়। যা আজ অনেকটাই হারানো অতীত।
ঢাকায় ছায়ানটের শিল্পীরা এদিন ভোরে সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহ্বান জানান। ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানট এই অনুষ্ঠানের সূচনা করে। ঢাকার বৈশাখী উৎসবের আরেকটি আবশ্যিক অঙ্গ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পয়লা বৈশাখে এটি বের হয়। এতে ফুটিয়ে তোলা হয় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে। ১৯৮৯ সাল থেকে এটি পয়লা বৈশাখ উৎসবের একটি বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
পয়লা বৈশাখ শুধু উৎসব নয়, নতুন করে জেগে ওঠার দিন। সমাজের সকল অন্যায় অসাম্য ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার নতুন শপথের দিন। এদিনে ধুলোপড়া অতীত পিছনে ফেলে নতুন স্বপ্ন বুনে বাংলার কৃষক।