''সন্দেশখালি কেউ ভাবতে পেরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এসে কাঁদছেন। একবারও বুঝতে পেরেছিলেন কীভাবে সাজিয়েছিল সন্দেশখালি? টাকা দিলে টাকা পাওয়া যায়। মায়েদের আত্মসম্মান গেলে তা পাওয়া যায় না। বিজেপিকে সতর্ক করছি।" এভাবেই এই রবিবার বীরভূমের লাভপুরের জনসভা থেকে সন্দেশখালি ইস্যুতের তীব্র আক্রমণ শানালেন মমতা। এরপরেই বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ''বিজেপিকে উৎখাত না করে আমি যাব না। যেমন সিপিএমকে উৎখাত করেছিলাম। সব বিজ্ঞাপন নস্যাৎ করে বলছি, সব মিথ্যা। আগের বার বলেছিলেন ২০০ পার। এবার বলছেন দেশে ৪০০ পার। পগার পার হয়ে যাবেন।''
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট চলাকালীন সংবাদপত্রে প্রচারকের নাম না দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন দেওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, টাকার উৎস লোকাতেই বিজ্ঞাপনে প্রচারকের নাম লিখছে না বিজেপি। লাভপুরে নির্বাচনী প্রচার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, 'এখন রোজ কাগজে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। আর ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। বিজ্ঞাপনে প্রচারকদের নাম নেই। এটা বেআইনি। আমরা কমিশনকে বলব। আমরা বিজ্ঞাপন করতে চাইলে আপনারা করতে দিতেন না। এটা বিজ্ঞাপন হতে পারে? বলছে তৃণমূল দুর্নীতির আঁতুরঘর। মোদিবাবু কত টাকার ফরেন ডিল করেছেন। ডিফেন্স ডিল করেছেন। একটা দেশের কাছে প্রতিরক্ষা বিক্রি করেছেন। দেশের নাম বলছি না। এখন আর কাশীপুর গান এন্ড সেল ফ্যাক্টরি অর্ডার পায় না। পিএম কেয়ারের টাকা কোথায় গেল? সত্যি কথা বলার সাহস নেই। বুকের পাটা নেই।'
মমতার চ্যালেঞ্জ, 'মোদির দল ক্ষমতা বা হিম্মত থাকলে পিসি-ভাইপো বলবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাম দিয়ে বলবে। তোরা ডাকাত, কয়লা মাফিয়া। তোরা কয়লা, গরু থেকে টাকা খাস। ওটা আমাদের বিষয় নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা টাকা খায়। মিথ্যা কথা বলার জন্য জিভ মোটা হয়ে যায়। আমি অনেক বছর এমপি ছিলাম। আমি সাংসদ থেকে পেনশন পেতে পারি। আমি সব ছেড়ে দিয়েছি। আমি বই লিখে যা টাকা পাই তা দিয়ে চলে আমার। আপনি তো কয়লা খনি থেকে দেশ সব বেচে দিচ্ছেন। আপনার বন্ধুদের কাছে। জিজ্ঞেস করবেন তাদের থেকে আমরা ইলেক্টোরাল বন্ড টাকা নিয়েছি কিনা? আমাকে চোর বলছেন? জিভ ছিঁড়ে পড়ে যাবে।'
লোকসভা নির্বাচনের সময় আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে মমতার দাবি, 'যে কেউ আদালতে মামলা করতে পারে। আর আদালতে বিজেপির কেউ না কেউ বসে আছে। প্রমাণ হল না তার আগে চোর বলে দিল। কেস প্রমাণিত না হলে আইনের চোখে অপরাধী নয়। কেষ্টকে ধরে রেখেছে ভোটের জন্য। ভোট হয়ে গেলে ছেড়ে দেবে। ক'দিন আগে চাঁদুর বাড়িতে গিয়েছিল। চাঁদুকে ডেকে বসিয়ে রেখেছিল। ওকে বলেছিল সন্ধ্যায় পলিটিক্যাল ফোন আসবে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বার্তা। আমার থেকে ভাল বিজেপিকে কেউ চেনে না। এটা বাংলার ভোট নয়, আমাকে চোর বলল আর আমি চোর হয়ে গেলাম। এটা মোদির ভোট, তাঁকে জবাব দিতে হবে তিনি চোর না ডাকাত।'
মামাবাড়ি নিয়ে নস্টালজিক মমতা
ছোটবেলায় প্রায়শই বীরভূমের কুসম্বা গ্রামে মামাবাড়িতে যেতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন সময়ে নিজেই একথা জানিয়েছেন। রবিবার বোলপুরের লাভপুরের নির্বাচনী সভার শুরুতে গ্রামের আলপথ, খেত, পুকুর-সবকিছু দেখে মুখ্যমন্ত্রী যেন নস্টালজিক। বক্তৃতার শুরুতে মমতা বলেন, "জানেন তো, আমি কুসম্বা গ্রামে জন্মেছি। অনেকবার গিয়েছি। কিন্তু চাকাইপুর গ্রামে কখনও যাওয়া হয়নি। এটা কিন্তু খুব খারাপ! আমাকে ওই গ্রামে একবার যেতেই হবে!" মমতা বলেন, "চাকাইপুরে আমার পিতৃদেবের জন্ম। ওখানে আমাদের অনেক দেবত্তোর সম্পত্তিও আছে।
এখন জ্যাঠার ছেলেরা দেখাশোনা করেন। কিন্তু ওই গ্রামটাই আমার কখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি।" তারপরই মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন, "ছোটবেলায় পরীক্ষা শেষ হলেই কুসুম্বা গ্রামে চলে যেতাম। এক মাস ধরে গ্রামে ঘুরে বেড়াতাম। কখনও মাছ ধরতাম, কখনও আঁখের বনে গিয়ে আঁখ কাটতাম। কত কীই না করেছি। অনেকে ভাবেন, আমি কী করে ধান পুঁততে পারি, কী করে রা্ন্না করতে পারি। এগুলো শিখতে হয় না। স্বতস্ফূর্ত প্রবৃত্তি। সব এই গ্রাম থেকেই শেখা। ছোটবেলায় আমি নিজে নিজেই কঙ্কালীতলায় চলে যেতাম। একটা ছোট্ট পুকুর রয়েছে। পাশে একটা ছবি, সেখানেই মায়ের পুজো হত। এখন আমরা মন্দির করেছি। আজ লাভপুরে মা ফুল্লরার মুখটা দর্শন করতে পারলাম। মা যদি কোনওদিন ডাকে, আমি নিজে ফুল্লরা মন্দিরে যাব। নান্দিকেশ্বরীতে যাব। কারণ ওখানে আমার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।"