সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
‘গনি খান চৌধুরী বলতেন, সিপিএম-কে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবেন। আমার স্থির বিশ্বাস ওঁর মতো হবে না। হুমায়ুন কবীর বেঁচে থাকতে থাকতেই তৃণমূলের পতন ঘটবে, ২০২৬ সালেই পতন ঘটবে।’ এভাবেই আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর হুঁশিয়ারি দিবেন বিদ্রোহী তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাংলার মুসলিমদের বলব, আগামী ভোটে এই অকর্মণ্য, তোলাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারটাকে বিদায় দিতে হবে।’
শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘অটলবিহারি বাজপেয়ীকে কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে কে ডেকে এনেছিলেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো! তাঁর মা গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন অটলজি। একটা তথ্য বাংলার মানুষকে দেব যে, সিপিএম-এর ৩৪ বছরের শাসনকালের চেয়ে…২০১১ সালের ১৩ মে-র দিন ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতন ঘটেছিল। সেদিন রাজ্যে আরএসএস-এর ৫৫৮টি শাখা অফিস ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে, তাঁর প্রশাসনের সমর্থনে, দেখেও না দেখার ভান করার আচরণে আজ সেই সংখ্যা ১২ হাজার। মুখে মুসলিমপ্রীতি দেখান, কিন্তু রাজ্যের ক্ষমতা হাতে নিয়ে তিনি সনাতনী ধর্মাবলম্বী মানুষদেরই তোষণ করে যাচ্ছেন।’
গত সপ্তাহেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নিজের নতুন রাজনৈতিক দল জনতা উন্নয়ন পার্টি তৈরি করেছেন হুমায়ুন কবীর। হুমায়ুন কবীরের দাবি, আগামী বছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই জোট, আসন বণ্টন সেরে ফেলবেন তিনি। তার পর প্রচারে নামবেন। দিনে তিনটি করে বিধানসভায় প্রচারে যাবেন তিনি। সময় বাঁচাতে ব্যবহার করবেন হেলিকপ্টার। তবে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম, কাউকে নিয়েই ভাবিত নন হুমায়ুন। তাঁর সাফ কথা, ‘হোক না লড়াই। বাংলার মানুষে কাকে বেছে নেন, দেখা হোক পরীক্ষা করে।’ তবে আইএসএফ এবং মিম-এর সঙ্গে জোট যে এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তা মেনে নিয়েছেন হুমায়ুন। তিনি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি বলে জানিয়েছেন। এর আগে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১৩৫টি আসনে লড়ার কথা জানিয়েছিলেন হুমায়ুন। এদিন তিনি জানিয়েছেন, ১৮২টি আসনে লড়বেন। নির্বাচনে আইএসএফ এবং আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম-এর সঙ্গে জোট বাঁধা নিয়েও আশা প্রকাশ করে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘১৮২টি আসনে লড়াই করে কী ফল আনব দেখবেন। বলে রাখছি, ফলাফলের দিন মিরাকল রেজাল্ট হবে। অনেকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বাংলার রাজনীতিত আগামী দিনে আমি, আইএসএফ জোটবদ্ধ হচ্ছি, মিম যোগদান করলে স্বাগত জানাচ্ছি।’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনেও মমতাকে আক্রমণ করে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মানুষকে নিদান দিচ্ছেন চপ-মুড়ি-ঘুগনির দোকান খোলার। ওঁর পরিবারে তো অনেক লোক আছে। তাঁদের দিয়ে করান না! ওঁদের পরিবারের লোক কী করছে, তা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। যে ২৫ হাজার ৭৫২ জনের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের কী অবস্থা! প্রত্যেকটা জায়গা দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলায় নতুন সরকার আনতে সর্বস্ব দিয়ে লড়ব।’