শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে দেশদ্রোহীদের ঘাঁটি বলে গত কয়েকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদার। শুভেন্দু এবং সুকান্তর পাশাপাশি দিলীপ ঘোষের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিয়ে অভিযোগ একেবারে অমূলক নয় তার প্রমাণ মিলল সোমবার।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেট। সেই গেট দিয়ে ঢুকেই ডানদিকে পড়ে টেকনোলজি ভবন। সেই বিল্ডিং-এর দেওয়ালের গায়েই ‘আজাদ কাশ্মীরে’র ডাক। যা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কারা এই দেওয়াল লিখল? তাদের পরিচয় কী? উত্তর অজানা। সবটাই তীব্র ধোঁয়াশা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেনারেল সেক্রেটারি তীর্থরাজ বর্ধন এই বিষয়ে তোপ দেগে বলেন, যেহেতু যাদবপুরে পুলিসের ঢোকার অনুমতি নেই, তাই দেশবিরোধীরা নিজেদে আস্তানা বানিয়ে রেখেছে যাদবপুরকে। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। কী করে আজাদ কাশ্মীরের দাবি করে শহরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়াল লিখন হল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। দেওয়াল লিখনে মুক্ত প্যালেস্তাইনেরও দাবি জানানো হয়েছে।
গতকালই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, “যাদবপুর তো চিরদিনই মাওবাদীদের আখড়া। ক্যাম্পাসের ভিতরে কোনও রাজনৈতিক অস্তিত্ব নেই। কিছু পুরনো লোক রয়েছে, যারা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। আর যারা নতুন ছেলেমেয়েরা যায়, তাদের ওখানে মাথা খাওয়া হয়। দিল্লিতে ওরকম চলেছিল, আজ হিম্মত নেই কিছু করার। ” দেশবিরোধীদের কীভাবে ঠান্ডা করতে হয়, জেএনইউ-তে তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ।
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির তলায় চাপা পড়ে এক পড়ুয়া আহত হন বলে পালটা অভিযোগ। যা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছেই।
অন্যদিকে প্রায় নজির বিহীন ভাবে সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকলো পুলিশ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে দুখনা পুলিশ ভ্যান দাঁড় করানো। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের ভিতরে-বাইরে পুলিশ আনাগোনা করছে। ২০১৪ সালে যাদবপুরে ‘হোক কলরব’ আন্দোলনে পর থেকে ক্যাম্পাসে যখন-তখন পুলিশ প্রবেশ করে না। সাধারণত উপাচার্য খবর না দেওয়া পর্যন্ত পুলিশ ঢোকে না ক্যাম্পাসে।
এদিন আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে ওমপ্রকাশ মিশ্রকে ঘিরে প্রবল বিক্ষোভের ছবি দেখা যায় যাদবপুরে। কোনও ক্রমে তিনি ভিতরে প্রবেশ করতে পারলেও, তাঁর ঘরের বাইরে বসে পড়েন বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীরা। এরপরই সাদা পুলিশের পোশাক ঢোকে বলে দাবি পড়ুয়াদের। এমনকী ওমপ্রকাশের ঘরের ভিতরেও পুলিশ ঢুকতে দেখা যায়। একাধিক মহিলা পুলিশের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে সেখানে। পড়ুয়ারা বলছেন, “আমরা পুলিশ ডাকিনি। কারা ডাকল? যারা ডেকেছে তারা কি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে? তারা বোধহয় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে।” কোন অর্ডারে পুলিশ এসেছে? প্রশ্ন পড়ুয়াদের। এখনও পর্যন্ত কোনও সদুত্তর মেলেনি।
ক্যাম্পাসে পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানাতে সহ উপাচার্যের কাছে যান পড়ুয়ারা। সহ উপাচার্য জানিয়েছেন, কে পুলিশ ঢুকিয়েছে, তা তাঁর জানা নেই। ওমপ্রকাশ মিশ্রও বলেন, “পুলিশ কেন এল, সে সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই।”
২০১৫ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যখন পড়ুয়ারা অবস্থানে বসেছিলেন, সেই সময় আচমকা মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের চ্যাংদোলা করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে যাদবপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। এসএফআই-এর দাবি, শাসক দল ক্যাম্পাসে আবারও বড় কিছু ঘটাতে চলেছে।

এবার পুলিশি হয়রানির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রনেতা। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন ‘ফেটসু’-র নেতা। তাঁর অভিযোগ, ছাত্রদের বারবার থানায় ডেকে পাঠানো হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আদালতে জানান, গত ৭ মার্চ পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে। ছাত্ররা থানায় হাজিরা দিলেও, পুলিশ তাঁদের মোবাইল চেয়ে বসে, যা নিয়ে ছাত্ররা আপত্তি জানান। এরপর থেকেই তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সোমবার ফের তাঁদের থানায় তলব করা হয়েছে। উদ্দীপন কুন্ডু হাইকোর্টে এই মামলার দ্রুত শুনানির আবেদন জানান। বিচারপতি আগামীকাল (মঙ্গলবার) ফের মামলাটি মেনশন করার নির্দেশ দিয়েছেন।