সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির অনিয়ন্ত্রিত ফি বৃদ্ধি ও অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে অবশেষে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবার স্কুলগুলির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনতে বিধানসভায় নতুন আইন আনার ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অভিভাবকরা বারবার অভিযোগ জানিয়েছেন, বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফি বাড়াচ্ছে, যার ফলে তাঁদের উপর আর্থিক চাপ বাড়ছে।
এমনকি স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে অন্যান্য অসঙ্গত আচরণের অভিযোগও উঠেছে। ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে অভিভাবকদের আন্দোলনও বারবার প্রশাসনের নজরে এসেছে।
এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার এবার কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন কমিশন তৈরি করা হয়েছে, ঠিক তেমনই এবার বেসরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একটি কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশন ফি বৃদ্ধি-সহ স্কুলের যাবতীয় অভিযোগ তদন্ত করবে।
মঙ্গলবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে বিরোধী বিধায়কদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন,
“বেসরকারি স্কুলগুলির অবাধ ফি বৃদ্ধি, অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি ও অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে আমরা সচেতন। তাই এবার এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে। খুব শিগগিরই বিধানসভায় এই সংক্রান্ত একটি বিল আনা হবে।” বর্তমানে এই বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি ট্রাইবুনাল রয়েছে, কিন্তু তাতেও সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হয়নি। নতুন আইন হলে, বেসরকারি স্কুলগুলির ফি কাঠামো ও অন্যান্য নীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইভেট স্কুল রেগুলেটরি কমিশন’ গঠন করার জন্য ২০২৩ সালে নীতিগত অনুমোদন দেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। ওই কমিশনে মোট ১১ জন সদস্য থাকবেন। যার প্রধান হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। আর বাকি সদস্যদের মধ্যে থাকবেন স্কুলশিক্ষা কমিশনার, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চশিক্ষা সংসদের সভাপতি এবং শিক্ষামন্ত্রী মনোনীত দু’জন শিক্ষাবিদ। এমনকী সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ডের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। সেখানে এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে তার সমাধান করা হবে। সেটাই এবার বড় আকারে আনতে চলেছে রাজ্য সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিরোধী বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, “সরকারের এই উদ্যোগ যেন রাজভবনে আটকে না যায়। অতীতে আমরা দেখেছি, অনেক বিল রাজভবনে পাঠানোর পর কার্যত হিমঘরে চলে যায়। এবার যেন তেমনটি না হয়।” বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই আইনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন এবং সরকারের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যেই রাজ্য সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিভাবকদের স্বার্থ রক্ষায় এই আইন যে বড় ভূমিকা নিতে পারে, তা স্পষ্ট। এখন দেখার বিষয়, নতুন বিল কীভাবে কার্যকর হয় এবং স্কুলগুলোর উপর কতটা নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হয়।