সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
হাওড়ার ঘোষপাড়ায় গুলি চালনার ঘটনায় রহস্য ক্রমেই আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এবং সেই গোটা ঘটনায় আহত পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে থাকা এক মহিলার ভূমিকা নিয়ে বাড়ছে ধোঁয়াশা। কারণ, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, হাওড়ায় গুলিবিদ্ধ পুলিশ আধিকারিক – হুগলির চণ্ডীতলা থানার আইসি জয়ন্ত পালের বয়ানেই একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) রাতে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, হাওড়ার ঘোষপাড়ায় একটি পেট্রল পাম্পের সামনে রাস্তাতেই গুলিবিদ্ধ হন জয়ন্ত পাল নামে ওই আইসি। কিন্তু, তাঁকে কে ও কেন গুলি করল? কোথায় তাঁকে গুলি মারা হয়েছিল? কখন তাঁকে গুলি করা হয়েছিল?
এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এক-এক সূত্রে এক-এক রকমের খবর সামনে আসছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বুধবার গভীর রাতে মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডের পাশে গৌড়ীয় মঠের কাছে একটি নির্জন গলিতে গুলিবিদ্ধ হন জয়ন্ত। এবং তিনি নাকি নিজেই নিজের সার্ভিস রিভলভার থেকে নিজের বাঁ হাতে গুলি করেন! কিন্তু, সেই রিভলবার কোথায় গেল?

আবার, অন্য একটি সূত্র অনুসারে – হাওড়ার ঘোষপাড়ায় এক পেট্রল পাম্পের সামনে একটি গাড়ির ভিতর গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সম্ভবত, গাড়ির ভিতর থাকা অন্য এক বা একাধিক সওয়ারির সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে বাগবিতণ্ড হয়েছিল আইসি-র। তার জেরেই আচমকা গুলি চলে এবং ওই পুলিশ আধিকারিক তাতে আহত হন। তাহলে এক্ষেত্রে কে গুলি করেছিল? উত্তর আপাতত অধরা।
এই গোটা ঘটনায় সবথেকে বেশি রহস্য যাঁকে ঘিরে রয়েছে, তিনি এক তরুণী। সূত্রের দাবি ওই তরুণী হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসিন্দা এবং তাঁর সঙ্গে জয়ন্তর আলাপ হয় সোশাল মিডিয়ায়।
তথ্য আরও বলছে, জয়ন্তকে নাকি ওই তরুণীর সঙ্গে একাধিকবার একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা গিয়েছে এর আগে। এলাকাবাসীর তরফে এমন দাবি করা হলেও পুলিশ তার সত্যাসত্য যাচাই করে দেখছে।
এদিক, এই ঘটনায় রহস্যময়ী তরুণীর ঠিকানা ইতিমধ্যেই পুলিশ বের করে ফেলেছে। সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ওই তরুণীর মা জানিয়েছেন, গুলিচালনার জন্য তাঁর মেয়ে দায়ী নন। পরিবারের দাবি, গত বুধবার রাতে বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরার পথে ওই পুলিশ আধিকারিককে আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন ওই তরুণী। তাই তিনি ও তাঁর বন্ধুরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
ওই তরুণীর মা বলেন, “আমার মেয়ে কেবল ওই লোকটাকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল। সেটা কি অপরাধ করেছে? কোন হাসপাতালে দেবে, সেটা নিয়েই দিশা হারিয়ে ফেলছে।” অফিসারের সঙ্গে পূর্ব পরিচিতির বিষয়টিও অস্বীকার করেন ওই তরুণীর মা-বোন। তিনি বলেন, “একজন অফিসারের সঙ্গে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কোনওদিনও সম্পর্ক হয়? রটাবার জন্য অনেক লোক অনেক কথাই বলতে পারে।” যদিও প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই তরুণী পুলিশ অফিসারের বিশেষ বান্ধবী। ২৫-৩০ হাজার টাকার কেনাকাটা করা নিয়েই তাঁর সঙ্গে বচসা হয়েছিল। আর তার থেকেই এই ঘটনা।
উল্লেখ্য, সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, ওই পুলিশ অফিসার নিজে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন, হাতে গুলি চালান। তারপর ওই সাদা গাড়ি থেকেই বেরিয়ে এসেছিলেন তরুণী। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ” আমরা শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে এসেছিলাম। ওই লোকটা বলেছিলেন, আমি পুলিশে আছি, এই ম্যাটারটাকে বেশি বড় করার দরকার নেই। ওই মেয়েটা গাড়ির ভিতরেই বসে ছিল। তার মুখে রক্ত লেগেছিল।”
তবে ওই পুলিশ অফিসারের বাঁ হাতের ওপর ছুঁয়ে যে গুলি বেরিয়ে গিয়েছে, সেটি সেভেন এমএম পিস্তলের। অর্থাৎ সার্ভিস রিভলবারের নয়। তাহলে কি অন্য কোনও বন্দুক ছিল ওই অফিসারের কাছে?
যে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন, সেই বেসরকারি হাসপাতালের ফেসিলিটি ডিরেক্টর বলছেন, যাঁরা পুলিশ অফিসারকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন, তাঁরা নিজেদের ‘কলিগ’ অর্থাৎ সহকর্মী বলেই পরিচয় দিয়েছিলেন। তাহলে প্রশ্ন তারা কারা?
প্রসঙ্গত, জয়ন্তকে ওই ঘটনার পর হাওড়ারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁকে ওই তরুণী এবং আরও তিনজন হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন বলে দাবি সূত্রের। তরুণীর মায়ের দাবি, ওই তিনজন তাঁর মেয়েরই বন্ধু।

সূত্রে এও জানা গিয়েছে, ওই ‘বড়বাবু’ শেরারে পানশালা চালাতেন। তাঁর পানশালাতে নাকি যেতেন জেলার অন্য বড়বাবুরাও। একাধিক নারীসঙ্গ ছিল তাঁর। এই গোটা বিষয়টি নিয়েই এখন একাধিক ধোঁয়াশা! এই মুহূর্তে জয়ন্ত পাল নামে ওই আইসিকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার জায়গায় সার্কেল ইন্সপেক্টর সন্ধি গঙ্গোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।