শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি হিন্দুদের অস্তিত্ব সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার পর ৭৮ বছরে এরাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ কমে ৬৭-৬৮ তে নেমে গেছে। আর ৫০ শতাংশের নিচে নামলেই সংবিধান বলে কিছু থাকবে না, ইসলামী শরিয়া শাসন লাগু হয়ে যাবে।” এভাবেই সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে বাংলার হিন্দুদের সতর্ক করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সোমবার সন্দেশখালিতে পূর্ব ঘোষিত গীতাদান কর্মসূচিতে অংশ নেন শুভেন্দু। বেশ কিছু স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তিনি গীতা বিতরণ করেন।
তার আগে পশ্চিমবঙ্গের দ্রুত জনবিন্যাস পরিবর্তন নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে তিনি সতর্ক করে বলেন, “আজ বাঙালিরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এখান থেকেই কিছু দূরে সাতক্ষীরা, ১৯৪৭ সালে ৩৩ শতাংশ থেকে আজকে সাত শতাংশ নেমে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গেরও এক অবস্থা। ১৯৫১ সালের জনগননা অনুযায়ী আমাদের হিন্দুদের জনসংখ্যা ছিল ৮৫ শতাংশ। আজ পশ্চিমবাংলায় হিন্দুরা ৬৭-৬৮ শতাংশে নেমে গেছে। ভয়ংকর ভাবে আজকে আমরা বাঙালি হিন্দুরা অস্তিত্ব সংকটে চলে এসেছি। এই অবস্থা থেকে হিন্দুদের একমাত্র উদ্ধার করতে পারে গীতা নাথ। তাই গীতার প্রচার-প্রসার আমাদের সকলকে করতে হবে। ইসকন, গৌড়ীয় মঠ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ সংগঠনের উপর আর নির্ভর থাকলে হবে না। সবাইকে নিজের নিজের কাজের সাথে সাথে ধর্ম রক্ষা করার কাজটা করতে হবে।”
এরপরে বাংলায় হিন্দুদের সংকট বাড়ছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “আজকে আমরা পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে ৫০ শতাংশের অধিক বলে সংবিধান চলছে। আমরা যেদিন পঞ্চাশের নিচে চলে যাব সেদিন শরিয়া আইন চলবে। পাশের ওখানে মাইকে বলা হচ্ছে যে কেউ এই সময় রাস্তায় বেরুতে পারবে না, বিশেষ করে মহিলারা। অতএব কি কঠিন অবস্থা! আগামী দিনে এখানেও হবে।”
অন্যদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ওপর বাম এবং অতিবাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের হামলার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই আঙ্গুল তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, “এরা ছাত্র নয় ‘মাকু’। যারা বলে ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী’ তারা কি ছাত্র নাকি? এর জন্য দায়ী মমতা ব্যানার্জী। ২০১৯ সালের তৎকালীন ভারত সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এখন তৃণমূলের মন্ত্রী, তার ওপর যখন আক্রমণ হয় মমতা ব্যানার্জী বিজেপি বলে পুলিশকে আটকে রেখেছিল। তদানীন্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ২০২৩ সালে আমাকে যখন মাওবাদীরা আক্রমণ করে যাদবপুরের গেটে, পুলিশ গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছিল, তাদেরকে মমতা ব্যানার্জির রাত্রি বারোটার সময় ফোনে মুক্তি দেয়। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করেছ, বাঘের পিঠে চড়েছ, ভুগতে হবে। যারা জাতীয় পতাকা তোলে না, বন্দেমাতরম গায় না, জাতীয় সংগীত মানে না, সনাতন ধর্মের বিরোধিতা করে, কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী বলে, টুকরো টুকরো গ্যাং, সব সমান। যারা সেকুলারিজমের কথা বলে তারা যেমন আর যারা মাওবাদীর কথা বলে, ভারতীয় সংবিধানকে মানে না, গোমতী থেকে গোদাবরী আলাদা দেশ চায় তারাও সমান।”

পাশাপাশি, রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পঠন পাঠন গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি গাইডলাইন মেনে শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি ছাড়া অন্য কাজ বন্ধ করে দেওয়া হোক। অবিলম্বে ছাত্র সংসদের এবং ওয়েব কুপার অফিসের তালা লাগানো হোক। ব্রাত্য বসু এবং সেকু মাকুদের ছাত্র সংগঠনের অফিসে তালা লাগানো উচিত। মাওবাদীদের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”