প্রিয়াঙ্কা মান্না। কলকাতা সারাদিন।
গরমের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাঙ্গালীদের একটা বড় অংশের প্রথম পছন্দ থাকে কাশ্মীর। জঙ্গি হামলায় বাধ্য হচ্ছেন কাশ্মীরের সুন্দর সাজানো প্রকৃতির বুকে কাটানোর পরিকল্পনা বাতিল করতে। বাংলার মধ্যেই বেছে নিতে পারে গরমের ছুটি কাটানোর নিরিবিলি ঠিকানা।
মেঘের রাজ্য লাভা কালিম্পংয়ের গর্ব। এই স্থানের সৌন্দর্য্যে মোহিত হন না, এমন মানুষ ভূ-ভারতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বন্ধুর পথ পেরিয়ে একবার লাভায় পৌঁছলে, সেই স্থানের প্রশান্তি আজীবন গায়ে বয়ে নিয় বেড়াতে হয়। অতিমারীর আবহে কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য তথা দেশের পর্যটন শিল্প। তবু অধীর আগ্রহে সুসময়ের অপেক্ষায় বসে রয়েছেন ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি। করোনা ভাইরাসের প্রভাব কমলেই পাহাড়ে হানা দেওয়ার মাস্টার প্ল্যান প্রায় তৈরি। কোমর বাঁধতে শুরু করেছেন ট্রাভেল এজেন্টরাও। এমনই এক প্রেক্ষাপটে পাহাড় সুন্দরী লাভা পর্যটকদের জন্য পুজোর সেরা ডেস্টিনেশন হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার অন্তর্গত এক পাহাড়ে ঘেরা ক্ষুদ্র জনপদ হল লাভা। কালিম্পিং শহর থেকে যার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। সমতল থেকে ৭২০০ ফুট বা ২১৯৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লাভায় শীতে বরফপাত হয় আকচার। সঙ্গে চলে মেঘের খেলা। যা এক অনন্য সৌন্দর্য্যের পীঠস্থানে পরিণত হয়। লাভার দরজা ঠেলেই কালিম্পিং থেকে কুমারী হয়ে নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করতে পারেন পর্যটকরা। শীতকালে এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিমাঙ্কে নেমে যায়। আবার গরমে পারদ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে পৌঁছে যায়। আবার বর্ষাকালে অন্যরূপে অবতীর্ণ হয় লাভা। বন্ধুর, পিচ্ছিল, পাথুরে পথের চড়াই-উতরাইয়ের সৌন্দর্য্যও একেবারে অন্যরকম।
কীভাবে পৌঁছবেন
১৮৩৬ জনসংখ্যা বিশিষ্ট লাভায় পৌঁছনোর পথ রয়েছে একাধিক। লাভার সবচেয়ে নিকটবর্তী বিমানবন্দর হলো বাগডোগরা। যা শিলিগুড়ি শহরের অদূরে অবস্থিত। বিমানবন্দরটির সঙ্গে লাভার যোগাযোগ ব্যবস্থাও সুগম। নিকটবর্তী রেল-স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি থেকে লাভা পৌঁছনোর গাড়ি পেতে পর্যটকদের কোনও সমস্যাই হয় না। কেউ পুরো গাড়ি বুক করে পাহাড় সফরে বেরিয়ে পড়েন। কেউ স্থানীয় ভাড়া গাড়িতে চেপে পাহাড়ি পথের মজা আরোহন করে গন্তব্যে পৌঁছন। কলকাতা থেকে শিলিগুড়িগামী কিংবা ভুটানগামী বাস ধরেও অনেকে লাভা পৌঁছনোর প্রথম ধাপ পেরিয়ে যান।
কী দেখবেন
কালিম্পং শহর থেকে অনেকটা চড়াইয়ের পর দেখা মেলে লাভার। যাত্রাপথে মেলে পাইন, বার্চের মতো আর্দ্র-আলপাইন জলবায়ুর বৃক্ষ সমারোহ। যেখানে সফেদ-ধূসর মেঘেরা খেলে বেড়ায় আপন খেয়ালে। লাভায় পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্যস্থল হল নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান। এই স্থান এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা পাখি-পরিদর্শনকারী ও প্রজাপতি-পরিদর্শনকারীদের একেবারে আদর্শ। স্থানীয়দের মতে লাভার বিভিন্ন অংশে নাকি ঘুরে বেড়ায় চিতাবাঘ, বুনো শুয়োর, লাল পান্ডা, কালো ভাল্লুক এবং মায়া হরিণের মতো বন্য প্রাণী। ২০১৫ সালে এখানে নাকি কয়েকটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারেরও দেখা মিলেছিল। তাদের ছবি নাকি ধরা পড়েছিল পর্যটকদেরই ক্যামেরায়। লাভার আরও এক আকর্ষণ নিরিবিলি, নির্ঝঞ্ঝাট বৌদ্ধ বিহার। রয়েছে সাইটগুলির মধ্যে রয়েছে চেঙ্গি জলপ্রপাত, রাখে-লা, কোলাখাম এবং চেন লিং মঠের মতো দৃষ্টিনন্দন স্থানও। এটি প্রাচীন ভারতের সিল্ক রুটে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হত। জলপাইগুড়ির দামদিম বা মালবাজার থেকে গোরুবথান হয়ে লাভা পৌঁছানো যায় সহজে। রাস্তাটি প্রশস্ত, মসৃন এবং প্রতিটি মোড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য পরিপূর্ণরূপে খেলা করে।
কোথায় থাকবেন
পর্যটকদের থাকার জন্য লাভায় রয়েছে বেশ কিছু হোটেল, রিসর্ট ও হোম স্টে। তবে পুজোর মরসুমে ঘর পেতে আগেভাগে বুকিং করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কোথায় থাকবেন তা নেট ঘেঁটে বেছে কিংবা ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গ কথা বলে প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করে দেওয়া ভাল।