শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
একদিকে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের কুকথা বলার ঘটনায় বিজেপি বিধায়কদের নিন্দা প্রস্তাব এবং অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশে তদন্তের নির্দেশ – এই দুই ইস্যু নিয়ে বুধবার সকাল থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন।
এদিন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় প্রিভিলেজ কমিটিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্রের খবর, চলতি অধিবেশনেই সেই রিপোর্ট জমা পড়বে। অন্যদিকে, এসআরডির চেয়ারম্যান বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলে কু-কথার ইস্যুকে কেন্দ্র করে মুলতবি প্রস্তাব আনে বিজেপি। সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন স্পিকার। এই জোড়া ইস্যুতে তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা। শঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে ওয়াকআউট করেন বিজেপির বিধায়করা।
বোলপুরের আইসি-কে ফোন করে হুমকি, কদর্য ভাষায় তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কথা- গোটা বিষয়ে চলতি মাসের শুরু থেকেই তপ্ত বাংলার রাজনীতি। ঘরে-বাইরে চাপে পড়তে হয়েছে অনুব্রতকে। দলের নির্দেশে ক্ষমাও চেয়েছেন, দিয়েছেন হাজিরাও। কিন্তু বিষয়টি থিতিয়ে পড়তে দিতে নারাজ বিজেপি। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিধানসভা উত্তাল করেন বিজেপি বিধায়করা।
অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মুলতবি প্রস্তাব আনে বিজেপি। অধিবেশনের শুরুতেই মহিলা বিজেপি বিধায়করা অনুব্রত মণ্ডলের কুকথা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের দাবি, এসআরডিএ-এর চেয়ারম্যান অনুব্রত মোবাইলে যেভাবে পুলিশ অফিসার ও তাঁর স্ত্রীর প্রতি কদর্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাতে মহিলা সমাজ অপমানিত। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ঠিক কী পদক্ষেপ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসআরডিএ অর্থাৎ রুরাল ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে অনুব্রতকে নিযুক্ত করেন। তারপর তিনি যখন গরু পাচার মামলায় জেলে যান, সেই ২ বছর ওই পদ ফাঁকাই থাকে। বুধবার বিজেপি বিধায়করা প্রশ্ন তোলেন, অনুব্রত কীভাবে সরকারি কর্মচারীকে গালি দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ এই পদে বহাল থাকবেন? বিজেপি একটি মুলতুবি প্রস্তাব আনে। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । বিজেপি বিধায়করা তখন বিক্ষোভ দেখিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। শুরু হয় ওয়াকআউট। অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করে বাইরে এসে সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রস্তাব পাঠ করেন ডাবগ্রাম – ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। বিজেপির মহিলা বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে শিখাদেবী বলেন, “যে ভাবে একজন পুলিশ আধিকারিকের মা ও স্ত্রীর প্রতি যে নোংরা ভাষা অনুব্রত মণ্ডল প্রয়োগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর হাত তাঁর মাথায় থাকায় এখনও তাঁকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। কোনও মহিলার মান সম্মান বলে কিছু জানেন না উনি। অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই। তৃণমূল কংগ্রেস করে বলে সে সব দিক থেকে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।”
বিধানসভার বাইরে বিজেপির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “স্পিকার সাহেব একই দিনে দুই রকম কথা বলছে। বিধানসভার বাইরে প্রধানমন্ত্রীকে তৃণমূল বিধায়করা আক্রমণ করলে স্পিকার জানান, বাইরে কে কী বলছেন তার আলোচনা ভিতরে হবে না। এদিকে বিধানসভার বাইরে বলা কথায় বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস!” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠেছে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। অধিবেশনে শুভেন্দু অনুপস্থিত ছিলেন। স্পিকার তাঁর বিরুদ্ধে যখন প্রস্তাব পাঠ করছেন, সেই সময় শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “আপনি গতকাল (মঙ্গলবার) বলেছিলেন যে বিধানসভার বাইরে কে কী বলেছে, তা বিধানসভার অধিবেশনে গৃহীত হবে না। কিন্তু বিধানসভার বাইরে বলা মন্তব্য নিয়ে কেন এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হল?” যদিও তার পরেও শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
মঙ্গলবার বিধানসভায় দেশের সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদজ্ঞাপন সংক্রান্ত আলোচনা প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর প্রকাশ্য বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় যা বলেননি, তা তিনি বাইরে বলেছেন। ওই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন তৃণমূলের চার মন্ত্রী। মঙ্গলবার বিধানসভা থেকে বেরিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “পাকিস্তানের প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শাহবাজ শরিফও পাকিস্তানের এত প্রশংসা করেন না। পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিং করে গিয়েছেন। আপনি নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহকে ছোট করছেন।” তাঁর এহেন বিবৃতির পরই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনেন। বুধবার তদন্তের নির্দেশ দিলেন স্পিকার।