শৌনক মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
৯ অগাস্ট ২০২৪। আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার কথা সাধারণ মানুষ জানার আগেই হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষী। তিনি নাকি মৃতদেহ আটকে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন সিপিএমের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে নিয়ে। মৃতদেহ পোস্টমর্টেম শুরু হওয়ার আগেই আরজি কর হাসপাতালের চত্বরে হাজির হয়ে যান কার্যত অর্ধেক আলিমুদ্দিন স্ট্রীট এবং বেশ কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী।
শ্মশান পর্যন্ত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে প্রতিবাদীদের ভিড়। পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করা থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা সমস্ত স্লোগান উঠে পড়ে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই। এমনকি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে আসার আগেই রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ করা শুরু হয়ে যায় এবং আন্দোলনের জন্য ধরনা মঞ্চ বেঁধে ফেলা হয় অদ্ভুত দ্রুততার সঙ্গে। যা সাধারনত সাধারন মানুষের পক্ষে খুব একটা সম্ভব নয় বলেই জানা। তবে যাই হোক এই আন্দোলনের ফলে যে তদন্তের গতি পেয়েছে এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ সোচ্চার হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ কলকাতার রাস্তায় মশাল নিয়ে নেমেছেন এগুলো অবশ্যই খুব ভালো কথা।
এমনকি টালিগঞ্জের অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সোহিনী সরকার এবং ফেসবুকে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় হাই গাইস বলে লাইভ করে শাড়ি বিক্রি করা অসংখ্য মহিলা অন্ত্রেপ্রেনার এবং মেকআপ আর্টিস্ট যে হাজার হাজার লোক জড়ো করে কলকাতার রাজপথ হারিয়েছিলেন এবং রাত জেগেছিলেন তা একটা সমাজের জেগে ওঠার লক্ষণ বটে।
এমনকি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা রীতিমত এগিয়ে এসে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিজেদের ক্যাম্পাস খুলে দিয়েছিলেন, রান্না করে খাবার দিয়েছিলেন এবং পুলিশের সঙ্গে লড়াইয়ে হাতে লাঠি তুলে নিয়েছিলেন। তাদের একটাই দাবি ছিল প্রত্যেক ৫ ফুট অন্তর একটা করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে।
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫। মাত্র এক বছর এক মাসের মধ্যেই কলকাতার আর এক প্রান্তে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই অস্বাভাবিকভাবে এবং অবশ্যই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল তৃতীয় বর্ষের ইংলিশ অনার্স ছাত্রী অনামিকা মন্ডলের। কিন্তু ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর পরে হঠাৎ করে কিভাবে একটি মেয়ে পুকুরে ডুবে মরে গেল তা জানা গেল না কারণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোথাও কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো নেই। ইউজিসি গাইডলাইন এবং কলকাতা হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো যায়নি কারণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের আপত্তি রয়েছে বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক অধ্যাপিকা তুমুল আপত্তি রয়েছে যাদবপুর ক্যাম্পাসের মধ্যে তাদের প্রাইভেট লাইফ স্টাইল বিঘ্নিত হবে বলে। সেই প্রাইভেট লাইফস্টাইল নিয়ে আমরা নাই বা আলোচনা করলাম! হয়তো ক্যাম্পাসের ভিতরে একান্তই ব্যক্তিগত কোন কাজকর্ম করতে অভ্যস্ত তাঁরা !

কিন্তু যাদবপুরের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলো।
কিন্তু আর জি করের ঘটনার পরেরদিনই সকালে বডি আটকাতে হাজির হয়ে যাওয়া মীনাক্ষীর দেখা নেই।
রাত দখলের ডাক দেওয়া রিমঝিমের দেখা নেই।
এই দেশে বাচ্চা না নিতে চাওয়া সোহিনী এখন রঘু ডাকাতের প্রমোশন নিয়ে ব্যস্ত।
এমনকি গত বছর আরজিকরের ঘটনার দোহাই দিয়ে যারা সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন উৎসবে ফিরছিনা এবং উৎসবে ফিরব না যতক্ষণ না দোষী শাস্তি পাবে এবং দোষীর ফাঁসি হবে – তাদের কারো কাছেও এমন স্লোগান পাওয়া যাচ্ছে না।
কোথায় গেলেন সবাই???