সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“যারা বলছেন বাংলা বিহার এবং ওডিশা দখল করার কথা বলছেন তারা ভাল থাকবেন! আপনার সেই ক্ষমতা নেই! তবে আমরা বসেও ললিপপ খাব ভাববেন না।” বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কড়া ভাষায় বাংলাদেশকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমরা যথেষ্ট সক্রিয়। তবে সব সময় ধৈর্যের পরীক্ষা দি।”
বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এই আবহে কলকাতা দখলের হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। ৪ দিনের মধ্যেই তাঁরা কলকাতা দখল করে নিতে পারেন, এমনই দাবি তাঁদের। অন্যদিকে কলকাতা এবং আগরতলার পাশাপাশি সেভেন সিস্টার্স দখল করার হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশ তিসরাই ইনসাফ পার্টির নেতা মিনাজ প্রধান।
এবার এই প্রসঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের কিছু মানুষের উস্কানিমূলক মন্তব্যের প্রবল সমালোচনা করলেন তিনি। মমতা সোমবার বিধানসভায় বলেন, “আপনারা বলবেন দখল করবেন, আর আমরা বসে ললিপপ খাব, এটা ভাববেন না। আমরা অখন্ড ভারতবর্ষ। বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। আমরা যেন অন্য কোনও উস্কানিতে পা না দিই।” মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “অনেকে এখানে আসতে চাইছে ওপার থেকে। কিন্তু সেটা দেখছে বিএসএফ। আমরা এই নিয়ে মন্তব্য করব না। সীমান্ত কিন্তু আমাদের দেখার বিষয় নয়। সবাইকে অনুরোধ করব, এমন প্ররোচনামূলক কথা কেউ বলবেন না। বিদেশসচিব গিয়েছেন বাংলাদেশে। আমরা তাদের মিটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। আসুন আমরা দেখিয়ে দিই, এপার বাংলা দেখিয়ে দিক জাতীয়তাবোধ, মমত্ববোধ, স্নেহবোধ। কেউ বিচ্ছিন্ন করতে আসলে প্রতিরোধ গড়ুন। যারা বলছে দখল করবে, তাদের বলব সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিষয়ে এদিন রীতিমতো ফুঁসে উঠে মমতা বলেন, “বাংলাদেশে অত্যাচার চলছে যা আমরা ভালভাবে দেখছি না। মাইনরিটিদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। দাঙ্গা করে দুষ্কৃতীরা। এমন কোনও মন্তব্য যেন না করি, যার প্রভাব যেন এখানে না পড়ে। সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সকলে নিজের মতো করে প্রতিবাদ করছে। আমরা দাঙ্গা চাই না। আমরা শান্তি চাই।”
সবাইকে শান্ত থাকার বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ”বাংলাদেশের যে সংখ্যালঘু অত্যাচার চলছে সেটাকে ভাল চোখে দেখছি না। দাঙ্গা কোনও হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান করে না। করে কিছু সমাজ বিরোধী, তারা সমাজের বোঝা। আমরা যেন এমন মন্তব্য না করি তাতে সমাজে তার প্রভাব পড়ে, কারও ক্ষতি হয়।” পুরো বিষয়টি কেন্দ্রের বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, তাদের কথা আমরা শুনব। আমরা কোনও ভাবেই দাঙ্গা চাই না, শান্তি চাই। একটা হিন্দুর গায় যা রক্ত আছে মুসলিমের কাছেও সেই রক্ত আছে বলেও এদিন মন্তব্য করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “একটা ভাইয়ের গায়ে যে রক্ত আছে, একটা বোনের গায়েও সে রক্ত আছে। কয়েকটা মিডিয়া যা করছে তা যথাযথ নয়। এটা উত্তরপ্রদেশ নয় যে আপনাদের ব্যান করব। কিন্তু আবেদন করছি যথাযথ থাকুন। আর কিছু ফেক ভিডিও ভাইরাল করা হচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল করছে। রাজনীতি করবেন না। ওখানে আমাদের যারা বন্ধু আছে তাদের ক্ষতি হবে।”