সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
‘আমরা অনেক দিন ধরে বলছি ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন গড়া হোক এবং তার সদস্য করা হোক বাংলাকে। ভুটানের জলেই এত বড় ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই ওরা ক্ষতিপূরণ দিক।’ সোমবার এভাবেই উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুজো মিটতেই প্রকৃতির ভয়াল রোষে পড়ে উত্তরবঙ্গ। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের দুই পার্বত্য জেলা দার্জিলিং ও কালিম্পঙের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িরও বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডবের স্মৃতি এখনও টাটকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দার্জিলিঙের মিরিক। শুধু মিরিকেই প্রকৃতির রোষের বলি হয়েছেন ৭ জন।
সোমবার জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় পায়ে হেঁটে গোটা এলাকা ঘুরে দেখা এবং ত্রাণসামগ্রী বিলি করার পাশাপাশি মৃতদের পরিবারের এক জন করে সদস্যের হাতে চাকরির নিয়োগপত্রও তুলে দিলেন তিনি। রবিবার আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন জায়গার পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন মমতা। তার পর সোমবার সকালে রওনা দেন নাগরাকাটার উদ্দেশ্যে। প্রথমেই বামনডাঙায় যান মমতা। সেখানে সাত জনের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ত্রাণ শিবির থেকে বেরনোর সময় আবার শিশু, খুদেদের হাতে একাধিক খেলনাও তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্যোগে এলাকাবাসীদের যা যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে সব রাজ্য সরকার পূরণ করে দেবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সাত জনের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার সময় মমতা বলেন, ‘যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়েছি। একটা করে চাকরি দেব বলেছিলাম, তারও ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। আজই চাকরির নিয়োগপত্র পেয়ে যাবেন।’ নাগরাকাটার যে সেতু পেরিয়ে গ্রামবাসীরা যাতায়াত করতেন, সেখানে লোহার একটি অস্থায়ী ছোট সেতুও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া, দুর্যোগে যাঁদের বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মমতা। যাঁদের কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে, তাঁরা শস্য বিমার টাকা পাবেন। শুধু তা-ই নয়, যাঁদের নথিপত্র হারিয়েছে কিংবা জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাঁদের জন্য বিশেষ ক্যাম্পেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। যাঁদের যা যা নথি হারিয়েছে, তার তালিকা তৈরি করে দিলেই সংশ্লিষ্ট নথির প্রতিলিপি বা ডুপ্লিকেট তৈরি করে দেবে সরকার। এদিন প্রথম ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে তিনি বললেন, ‘জল একটু নামলেই বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, এখানে যে লোহার সেতুটা ভেঙে গিয়েছিল, তাও মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। যাদের কৃষিজমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তাঁদেরও সরকার বিমা দেবে। এতে আপনাদের কোনও খরচ হবে না, রাজ্য সরকারই সব কাজ করিয়ে দেবে। যাদের যা কাগজপত্র হারিয়েছে ত্রাণ শিবিরে এসে জানান, সেই কাগজের একটা ডুপ্লিকেট আমরা আবার বানিয়ে দেব। কারওর ছাগল-গরু হারিয়ে গেলে, তারা সেটাও ফেরত পাবেন।’

পাশাপাশি, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বলেন, ‘সবটাই তো আমাদের করতে হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। না দিল্লি এক পয়সা দেয়, না কেউ এক পয়সা দেয়।’ তিনি জানান, ‘ভুটানের জলে এত বড় ঘটনা ঘটেছে। ওদের আমরা অনেকদিন ধরে ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন তৈরির কথা বলেছি। বাংলাকেও সেই কমিশনের সদস্য করতে বলেছি। যাই হোক, আমাদের চাপে আগামী ১৬ তারিখ একটা বৈঠক হচ্ছে শুনলাম। আমরাও একজন অফিসারকে পাঠাব।’