সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
বাংলায় কথা বলার অপরাধে বিজেপি শাসিত ওড়িশার সম্বলপুরে বাংলাদেশি সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল মুর্শিদাবাদের পরিচয় শ্রমিক জুয়েল রানাকে। গতকাল নিহত শ্রমিক জুয়েল রানার মৃতদেহ এসে পৌঁছেছে মুর্শিদাবাদ এর বাড়িতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রথম থেকেই নিহত শ্রমিকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল এবং স্থানীয় প্রশাসন।
এবারে আরও এক ধাপ এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিশেষ টিম গঠন করে এই হত্যার ঘটনার তদন্তের জন্য পাঠালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ২৪ ডিসেম্বর ওড়িশার সম্বলপুরে জুয়েল রানা নামে মুর্শিদাবাদের এক শ্রমিককে বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিয়ে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। এই হামলায় আরও ২ পরিযায়ী শ্রমিক জখম হয়েছেন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত শ্রমিকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের সুতি ১ নম্বর ব্লকের তিন বাসিন্দা জুয়েল রানা, আকির শেখ এবং পলাশ শেখ গত ২০ ডিসেম্বর জীবিকার সন্ধানে ওড়িশার সম্বলপুরে যান। ২৪ ডিসেম্বর রাতে ওই তিন যুবকের কর্মক্ষেত্রে অতর্কিতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির গুন্ডা হিসেবে পরিচিত একদল লোক মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ওই শ্রমিকদের উপর চড়া হয়। আরিক ও পলাশ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে পারলেও জুয়েলকে ধরে ফেলে উন্মত্ত জনতা। তাঁকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। তাদের তরফে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য দুই জখম এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনায় আজ বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রতিটি বিজেপি – শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপর যে নির্মম অত্যাচার ও নিগ্রহ নেমে এসেছে আমরা তাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আমরা নিগৃহীত, সন্ত্রস্ত ও অত্যাচারিত সেইসব পরিযায়ী বাংলাভাষী পরিবারের পাশে আছি, সেই সব পরিবারকে আমরা সমস্ত রকম সমর্থন দেবো। মানুষের জীবনের বিনিময়ে কোন মূল্য হয় না, কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটছে সেইসব ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার রইল। অতি সম্প্রতি জঙ্গিপুর এলাকার কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের উপর বিজেপি- শাসিত ওড়িশা রাজ্যে নানা অত্যাচার নেমে এসেছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে জঙ্গিপুরের সুতি এলাকার এক তরুণ পরিযায়ী শ্রমিককে সম্বলপুরে ২৪ শে ডিসেম্বর তারিখে পিটিয়ে মারা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে পরিযায়ী শ্রমিকরা ওড়িশা থেকে সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা পরিবারগুলির সঙ্গে আছি এবং নিহতের পরিবারের প্রতি আমাদের আর্থিক সহায়তাও পৌঁছে যাবে। বিজেপি – শাসিত রাজ্যগুলির এই সমস্ত ঘটনায় নিগ্রহকারীদের প্রতি আমাদের নিন্দা ও নিগৃহীতদের জন্য আমাদের সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি রইল। বাংলা ভাষা বলা কোনো অপরাধ হতে পারে না। নিহত তরুণ জুয়েল রানার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ইতিমধ্যে সুতি থানায় জিরো এফ আই আর রুজু করেছে এবং ইতিমধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার রাজ্যের পুলিশ টিম ওড়িশা গিয়েছে তদন্তের জন্য।’

এর আগেই অবশ্য তৃণমূলের তরফে ওড়িশার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, ‘বিজেপি যে বাঙালি বিদ্বেষী তা ফের প্রমাণ করল। বাংলার প্রতি প্রতিহিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করছে গেরুয়া শিবির। ফের বাংলাদেশি অপবাদ দিয়ে বাঙালিকে খুন করা হল। অনুপ্রবেশকারী না হওয়া সত্ত্বেও একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বিজেপি বাংলাভাষী ভারতীয়দের অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত ও সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। বাংলা বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করতে না চাওয়ায় বাঙালিদের আর কতদিন এসব সহ্য করতে হবে? বাঙালি হওয়ার কারণে যদি এভাবে লাঞ্ছনা সহ্য করা হয়, তাহলে তা আমরা সহ্য করব না। বাংলা মাথা নত করবে না।’