বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ প্রবাদ-প্রবচনে। তার মধ্যে অন্যতম হলো – “সর্ষের মধ্যে ভূত”। এর মূল অর্থ হলো, যাকে আমরা সমস্যার সমাধানকারী বা ভরসার জায়গা ভেবেছিলাম, আসলে সেই উৎসেই যদি ত্রুটি বা সমস্যা থেকে যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অর্থাৎ ভরসার জায়গাই যদি প্রতারণাপূর্ণ হয়, তাহলে তার ওপর নির্ভর করা সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাঁড়ায়।
আক্ষরিক অর্থ
প্রাচীনকালে বিশ্বাস করা হতো, ভূত তাড়ানোর জন্য সর্ষের বীজ ব্যবহার করা যায়। এখন যদি সেই সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে থাকে, তবে ভূত তাড়ানোর উপায়ই আর থাকে না। এখান থেকেই প্রবাদটির উৎপত্তি।
ভাবার্থ
প্রবাদটির গভীর অর্থ হলো – যে মাধ্যম বা যে উপাদানের মাধ্যমে সমাধান আশা করা হচ্ছিল, সেটাই যদি সমস্যার মূল হয়ে দাঁড়ায়, তবে সমস্যাকে মিটানো আর সম্ভব হয় না। একে বলা যায়, “সমাধানই যদি সমস্যার অংশ হয়ে যায়”।
বাস্তব জীবনের উদাহরণ
চিকিৎসা ক্ষেত্রে: যদি ওষুধ ভেজালযুক্ত হয়, তবে রোগ সারানোর বদলে ক্ষতি বাড়বে।
সমাজে: দুর্নীতিবিরোধী কোনো সংস্থার নেতারাই যদি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তবে সাধারণ মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে?
খাদ্যে ভেজাল: সুস্থতার জন্য যে খাবার আমরা খাই, যদি তাতেই বিষ মেশানো থাকে, তবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি অনিবার্য।
ব্যক্তিগত জীবনে: যাকে সবচেয়ে বিশ্বাস করি, যদি সেই মানুষটিই প্রতারণা করে, তখন আঘাত সবচেয়ে গভীর হয়।
প্রবাদটির সামাজিক ব্যবহার
“সর্ষের মধ্যে ভূত” প্রবাদটি বাংলার সমাজে নানা সময় প্রয়োগ হয়। বিশেষত যখন–
খাদ্যে ভেজাল মেশানো ধরা পড়ে।
কোনো সরকারি দফতর বা দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান নিজেই দুর্নীতিতে ডুবে যায়।
যাকে রক্ষক মনে করা হয়েছিল, সেই মানুষটিই ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়।
এই প্রবাদটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় – সবসময় অন্ধভাবে কাউকে বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করা উচিত নয়। সত্যিকারের ভালো-মন্দ যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।

“সর্ষের মধ্যে ভূত” প্রবাদটি আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। আমরা যাকে সমাধান মনে করি, সে-ই যদি সমস্যার উৎস হয়, তবে আমাদের সতর্ক হতে হবে। তাই যে কোনো বিষয় বা ব্যক্তিকে বিশ্বাস করার আগে সঠিক যাচাই-বাছাই করা জরুরি। এভাবে এই প্রবাদ শুধু ভাষাগত সৌন্দর্যই নয়, সমাজ ও জীবনের বাস্তবতাকেও তুলে ধরে।