সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
নিউটাউনের মতো আধুনিক ও কলকাতা-সংলগ্ন এলাকায় মাত্র ৬ লক্ষ টাকায় নিজের বাড়ি—শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সেটাই বাস্তব করতে চলেছে রাজ্য সরকার। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য বড় উদ্যোগের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের বহু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বহুদিনের ঘরের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
রাজ্য সরকারের লক্ষ্য একেবারেই স্পষ্ট—সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ ও স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। সেই লক্ষ্যেই হিডকোর মাধ্যমে নিউটাউনে তৈরি হচ্ছে বিশেষ আবাসন প্রকল্প। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে মাত্র ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক কামরার ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। নিউটাউনের মতো পরিকল্পিত শহরে এই দামে বাড়ি পাওয়া কার্যত নজিরবিহীন।
এই এক কামরার ফ্ল্যাটগুলির আয়তন হবে প্রায় ২৯৮ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে থাকবে একটি ঘর, রান্নার জায়গা এবং একটি শৌচাগার। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটানোর মতো পরিকাঠামোই থাকছে এই আবাসনে। পাশাপাশি, যারা একটু বড় বাড়ি চান, তাঁদের জন্য দুই কামরার ফ্ল্যাটের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যদিও সেক্ষেত্রে দাম কিছুটা বেশি হবে।
এই প্রকল্প মূলত সেই পরিবারগুলির জন্য, যাদের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা বা তার কম। নবান্ন সূত্রের খবর, এই আয়ের সীমার মধ্যেই আবেদনকারীদের থাকতে হবে। কীভাবে আবেদন করা যাবে, কী কী নথি লাগবে এবং কবে থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে—এই সব বিষয়ে খুব শিগগিরই সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’—এই দুই আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পগুলির রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে হিডকো। ফ্ল্যাট নির্মাণ সম্পূর্ণ হলেই সেগুলি যোগ্য আবেদনকারীদের মধ্যে বরাদ্দ করা হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে, হিডকোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা যাবে।
সূত্রের খবর, ‘নিজন্ন’ প্রকল্পে মোট ৪৯০টি এক কামরার ফ্ল্যাট রয়েছে। এই প্রকল্পে আবেদন করার সময় আবেদনকারীকে অগ্রিম হিসেবে ৬০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। অন্যদিকে, ‘সুজন্ন’ প্রকল্পে রয়েছে ৭২০টি দুই কামরার ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটগুলির আয়তন প্রায় ৬১৭.৬৩ বর্গফুট এবং দাম প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য মাসিক আয়ের সীমা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ১ টাকা থেকে ৬৫ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে, রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ শুধু একটি আবাসন প্রকল্প নয়, বরং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের সামাজিক সুরক্ষার দিকেও এক বড় পদক্ষেপ। ভোটের আগে এই ঘোষণায় রাজনৈতিক সমীকরণ যেমন বদলাতে পারে, তেমনই বাস্তব জীবনে বহু পরিবারের ঠিকানা বদলে দেওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।