রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে বাংলার রাজ্য রাজনীতি যখন তোলপাড় সেই সময় দলের সর্বস্তরের নেতা কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিদের বারে বারে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল। মমতা নিজেও বারে বারে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের যেকোনো ধরনের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরেও জ্বরের একাধিক জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে বেফাঁস মন্তব্য করে জনসাধারণের মধ্যে বিতর্ক বাড়িয়ে কার্যত তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। ইতিমধ্যেই অশোকনগরের তৃণমূল নেতা অতীত সরকারকে দল থেকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল।
এবারে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হলো টলিউডের দুই অভিনেতা অভিনেত্রী কাঞ্চন মল্লিক এবং লাভলী মৈত্রকে। কাঞ্চনকে সতর্ক করা মাত্রই কাঞ্চন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই।
লাভলি কী বলেছিলেন?
ডাক্তাররা ‘কসাই’ হয়ে গিয়েছেন বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন লাভলি। সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক লাভলি মৈত্র বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে যদি আঙুল কেউ তোলে, সেই আঙুল কী করে নামাতে হয় আমরা খুব ভাল জানি। আমরা শান্ত আছি কিন্তু আমরা দুর্বল নই। সিপিএম সায়ন-সুজনরা ঘুরে বেড়ায় তার একটাই কারণ বদল হয়েছিল, বদলা হয়নি।”
একদিকে যেমন সিপিএমের নেতারা লাভলির নিশানায়, তেমনই তিনি ছেড়ে কথা বললেন না ডাক্তারদেরও। তাঁদের কসাই বলে দেগে দিলেন তৃণমূল বিধায়ক। “কসাইতে পরিণত হচ্ছে দিনের পর দিন ডাক্তাররা। দিনের পর দিন আন্দোলনের নামে মানুষকে, গরিব গরিব মানুষ যারা চিকিৎসার জন্য আসে, যারা গ্রামবাংলা থেকে আসে, যারা প্রান্তিক এলাকা থেকে আসে, যাদের চিকিৎসা করার ক্ষমতা নেই প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে, আজকে তারা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।” এখানেই থামেননি লাভলি। বলেন, “কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। এরা মানবিক? এরা মানুষ? কসাইতে পরিণত হচ্ছে দিনের পর দিন ডাক্তাররা। কসাইতে পরিণত হচ্ছে দিনের পর দিন ডাক্তাররা।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয় তৃণমূল বিধায়ক লাভলি মৈত্রকে। সেই সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা থেকে ভবিষ্যতে বিরত থাকতে বলা হয় লাভলি মৈত্রকে।
সতর্কবার্তা অভিষেকের
দলের জনপ্রতিনিধিদের মুখে এই ধরনের অশালীন বক্তব্য যে জনমানুষে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে তা বুঝতে পেরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লাভলি অথবা কাঞ্চনের নাম না করেই লেখেন, “দল নির্বিশেষে জনপ্রতিনিধিদের আরও নম্র এবং সহানুভূতিশীল হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রত্যেকের কাছে আমি আর্জি জানাব যে তাঁরা যেন স্বাস্থ্য সমাজ বা নাগরিক সমাজের কারও বিরুদ্ধে আজেবাজে মন্তব্য না করেন। প্রত্যেকের প্রতিবাদ এবং মতপ্রকাশের অধিকার আছে। প্রত্যেকের প্রতিবাদ এবং মতপ্রকাশের অধিকার আছে – এই বিষয়টাই বিজেপি-শাসিত রাজ্যের থেকে বাংলাকে আলাদা করে তোলে। আমরা নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে বুলডোজার মডেল এবং দমিয়ে রাখার রাজনৈতিক কৌশলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এখন আমাদের গঠনমূলক পদক্ষেপ করতে হবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে ভবিষ্যতে এরকম ভয়ংকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। যতক্ষণ না দোষীরা শাস্তি পাচ্ছেন এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধর্ষণের মামলা শেষ করার আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, ততক্ষণ এই লড়াইয়ে বাংলাকে অবশ্যই জোটবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।”