কনিষ্ক সামন্ত। কলকাতা সারাদিন।
মন্দারমনিতে হোটেল ভাঙার জন্য বুলডোজার চালাবে না রাজ্য সরকার। এমন সিদ্ধান্ত গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবারেই প্রশাসনিক আধিকারিকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। এর পাশাপাশি জাতীয় পরিবেশ আদালতের পক্ষ থেকে মন্দারমনির অন্তত ১৪০ হোটেলকে বেআইনি বলেছেন নিহিত করে বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কিভাবে তার সমাধান সূত্র খুঁজে বের করা যায় তার জন্য বৈঠকে বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্য সচিবকে। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই বৈঠকের প্রস্তুতি শুরুর পাশাপাশি এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল মন্দারমনির হোটেলিয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী জেলাশাসকের তদারকিতে সমুদ্রের ধারে ১৪৪ হোটেল ভাঙা হবে বলে আতঙ্ক ছড়ায়। সেই মতো জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুলডোজার চালিয়ে বেআইনি হোটেলগুলি ভেঙে দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি জানার পরেই মুখ্য সচিব কে জরুরি ভিত্তিতে হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি আইনি কোন প্রক্রিয়া রয়েছে কিনা তা দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কয়েকদিন আগেই সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের পক্ষ থেকে দেশে আদালতের নির্দেশ ছাড়া বুলডোজার চালানোর উপরে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল সেই নির্দেশ মেনেই মুখ্যমন্ত্রী বুল্ডোজার চালিয়ে হোটেল ভাঙার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, সমুদ্রের উপকূল থেকে ডাঙার দিকে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যে কোনও নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে দেশের আইনে। কিন্তু সেই আইন তথা বিধি অমান্য করে মন্দারমনিতে অজস্র হোটেল মাথাচাড়া দেওয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা হয়। যে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালে ওই আদালত ওয়েস্ট বেঙ্গল কোস্টাল রেগুলেশন জোন অথরিটিকে সব বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেয়। সেই সূত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির চেয়ারম্যান সম্প্রতি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেন। জানা গিয়েছে, জেলাশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী ২০ নভেম্বরের মধ্যে প্রায় ১৪৪ হোটেল ভাঙার নির্দেশ জারি হয়েছিল। অন্যথায় কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলা হয়েছিল। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরেই আজ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় হোটেল মালিকদের সংগঠন। মন্দারমনি হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মির মমরেজ আলি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন থাকবে যে, এত মানুষের রোজগার চলে গেলে বিশাল ক্ষতি হবে। তাই তাঁরা চান এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক। তাঁদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মুখ্য সচিব ইতিমধ্যেই জেলাশাসকের মাধ্যমে হোটেল মালিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসার প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
মন্দারমনি হোটেল ব্যবসায়ীরা মনে করেন, শুধু তাদের এলাকাতেই কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, অথচ অন্য সমুদ্রসৈকতগুলিতেও একই ধরনের হোটেল গড়ে উঠেছে। দিঘা, পুরী, গোয়া- এসব জায়গাতেও সমুদ্রের কাছে হোটেল রয়েছে, তবে সেখানে এ ধরনের পদক্ষেপ কেন হয়নি? এই পরিস্থিতিতে হোটেল ব্যবসায়ীরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাদের দাবি, এই নোটিশ যদি কার্যকর হয়, তাহলে বহু মানুষ তাদের জীবিকা হারাবেন। তাই তারা চান, এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা হোক। আগামী শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে হোটেলস অ্যাসোসিয়েশনের করা মামলার শুনানি রয়েছে। মন্দারমণির হোটেল ভাঙার নির্দেশ নিয়েই ওই মামলা দায়ের হয়েছে।