সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানি। বললেন, ”মমতা মানেই হল সহানুভূতি। আর দিদি মানে, অবিশ্রান্ত নেত্রী।” আম্বানির কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে নবজাগরণ দেখছে বাংলা।” বাংলায় রিলায়েন্সের বিনিয়োগের খতিয়ানও এদিন তুলে ধরেন মুকেশ।
মুকেশ আম্বানি এদিন বলেন, ”মা কালীর কাছে আমি প্রার্থনা করি। এই বাংলার পুণ্যভূমিতে সকলকে প্রণাম জানাই। বাংলা নবজাগরণের ভূমি। এখন বাংলা অর্থনীতির নবজাগরণ ভূমি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজী সকলেই এই বাংলার পুণ্যভূমির সন্তান। আমি ২০১৬ সাল থেকে আসছি। প্রতি বছর আমি ভাবি এই সামিট আলাদা কি হবে? আর এসে সামিট দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। আমি দেশের পশ্চিম প্রান্তে থাকি। যা ব্যবসার জায়গা। কিন্তু দ্রুত সেটার অবস্থা বদল হচ্ছে। বাংলা মানে মমতা দিদি, মমতা দিদি মানে বাংলার ব্যবসা। মমতা মানে সকলের পাশে থাকা। আর দিদি সকলের পাশেই থাকে। মায়ের মুখ হল স্বর্গ সুখ। বাংলায় সেই মায়ের চেহারা আমি দেখি। আপনার নেতৃত্বে বাংলা যথাযথ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলায় বিনিয়োগ করার এখন দারুণ সময়।”
আম্বানি জানান, ”এখন ৫০,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আমরা করেছি। আমরা এক লক্ষ সরাসরি কর্মসংস্থান করেছি। ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার – জিও এখন শুধু এক নম্বর নয়! এটা বিশ্বের এক নম্বর ডেটা কোম্পানি। জিও এখন বাংলায় ১০০% কভার করেছে। কলকাতায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় জিও। এখন ৫জি গ্রামীণ এলাকায় কাজ করছে। যা স্কুলের বাচ্চাদের সাহায্য করছে। কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন দিঘায় আগামী কিছু মাসে কাজ শুরু করবে। AI ও ডেটা সেন্টার কলকাতায় কাজ করবে। এই ট্রান্সফরমেশন বাংলায় নতুন সুযোগ আনবে। তিন বছরে ওয়্যার হাউজ আরও বাড়বে। স্বদেশ আমাদের নতুন কাজ যা দেশীয় প্রডাক্ট বিক্রি করবে। বাংলার জামদানি, বালুচরী, মসলিন, পাটের কাজ, ও খাবার এর মাধ্যমে বিশ্বের নানা জায়গায় পাওয়া যাবে। সোলার বাংলা, সোনার বাংলায় আমরা কাজ করব। কালীঘাটের মন্দিরের কাজ আমরা করেছি। ব্যক্তিগত ভাবে এই কাজে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই দিদি। আমার পরিবার এই পুণ্যভূমির সঙ্গে জড়িত। আবেগ জড়িয়ে আছে আমাদের। রিলায়েন্সের দারুণ অভিজ্ঞতা এখানে কাজ করে। দিদি থাকলে ব্যবসায়িকরা রেড কার্পেট পায়। তাই বাংলায় বিনিয়োগ করতে আসুন।

বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন থেকে এদিন বাংলাকে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি দেন মুকেশ। তিনি বলেন-
১) “২০১৬ সালে বাংলার মাটি থেকেই Jio-র বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু হয়। দিদি আমাদের জন্য লাকি। এই বাংলা থেকেই ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হয়, যার উপর ভর করে ভারত ডিজিটাল সুপার পাওয়ার হয়ে ওঠে। আজ জিও শুধু ভারতের ১ নম্বর ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা নয়, পৃথিবীর ১ নম্বর সংস্থা, যার সূচনা হয় কলকাতা থেকে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে Jio-র 5জি পরিষেবাও এখান থেকে শুরু হয়। বাংলায় ১০০ শতাংশ পরিষেবা দেয় Jio।”
“বাংলার মানুষের কাছে, প্রত্যেক গ্রাহকের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। Jio-র ডেটা সবচেয়ে বেশি বাংলাতেই ব্যবহৃত হয়। গ্রামীণ বাংলাকে বদলে দিয়েছে Jio. 5জি হাইস্পিড ইন্টারনেটের দৌলতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের পড়াশোনা সহজতর হয়েছে। ঘরে ঘরে তো বইকি, হাতে হাতে বিনোদন, খেলা পৌঁছে গিয়েছে।”
“বাংলার প্রথম কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে দিঘায়। ফাইবার কানেক্টিভিটি তৈরি হয়েছে। আগামী বঠরের গোড়া থেকে শুরু হচ্ছে। পূর্ব-ভারতে ডিজিটাল লিডারশিপে নেতৃত্ব দেবে বাংলা।” Jio পৃথিবীর সেরা AI পরিকাঠামো গড়ে তুলছে দেশে। আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, আগামী ন’মাসে কলকাতায় ডেটা সেন্টারকে AI ডেটা সেন্টারে পরিণত করব।”
“5জি স্ট্যাক, Jio ফাইবার, Air ফাইবার, যন্ত্রমেধা, ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে আধুনিক হয়ে উঠবে বাংলা। নতুন কর্মসংস্থান হবে, ব্যবসার সুযোগ বাড়বে বাংলায়। আমার আশা, Jio AI পরিকাঠামো বাংলার প্রতিভাধরদের তুলে ধরবে। নিজের রাজ্যেই তাঁরা অসাধ্য সাধন করবেন।”
২) এই মুহূর্তে বাংলায় ১৩০০ স্টোর আছে Reliance Retail-এর। আগামী তিন বছরে সংখ্যাটি বাড়িয়ে ১৭০০০ করার লক্ষ্য আমাদের। আমাদের নিউ কমার্স, এক্সপ্রেস ডেলিভারি পরিষেবায় খুচরো ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছেন। আয় বেড়েছে তাঁদের।
৩) “বাংলার হস্তশিল্পকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেবে Reliance-এর Swadesh প্ল্যাটফর্ম। বাংলার শিল্পীদের পণ্য দেশ এবং বিদেশে পৌঁছে দেওয়া হবে। লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিসে Swadesh স্টোর খোলা হবে। সেখানে বাংলার জামদানি, বালুচরি, তাঁত, মুর্শিদাবাদ সিল্ক, বিষ্ণুপুরী সিল্ক, তসর সিল্ক, কাঁথা শাড়ি, মসলিন এবং জুট ও খাদি পণ্য তুলে ধরা হবে আন্তর্জাতিক বাজারে।
বিস্কফার্ম, আনমোল রাজা, সিটি গোল্ট, প্রভুজি, বিশ্ববাংলার খাদ্যপণ্য রাখা হবে বিদেশে Swadesh-এর স্টোরে।”
৪) “নিউ এনার্জি ইনিশিয়েটিভ নিচ্ছে Reliance. গ্রিন এনার্জি, গ্রিন ইকোনমিতে বাংলা এগোবে। আমি বলছি, সোলার বাংলা ফর সোনার বাংলা।”
৫) “রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কালীঘাট মন্দির সংস্কারে হাত দিয়েছে Reliance. আমাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। রাজ্য সরকারই অধিকাংশ কাজ করেছে। রাজ্যের মানুষের চাহিদাপূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।”
মুকেশ আরও বলেন, “বাংলার পুণ্যভূমির সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সংযোগ রয়েছে। শুধু ব্যবসায়িক নয়, আবেগের সম্পর্ক। দিদিকে শ্রদ্ধা করি আমি। সকলকে বলব, বাংলায় বিনিয়োগ করুন। বাংলায় Reliance-এর অভিজ্ঞতা খুব ভাল। মমতাদি দেশের অন্যতম তক্ষ শাসক। উনি থাকাকালীন ব্যবসায়ীদের জন্য এখানে লাল গালিচা পাতা রয়েছে। বাংলায় আসুন, নতুন অধ্যায়ের সূচনা করুন। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, Reliance বাংলার বিশ্বস্ত বন্ধু। আপনার বাংলা আমাদের বাংলা।”

মুকেশ এদিন জানান, বাংলায় বিনিয়োগের এটাই আদর্শ সময়। বাংলার ১০ কোটি মানুষ পরিশ্রমী, প্রতিভাশালী এবং সংস্কৃতি সম্পন্ন। বাংলার সম্পদ বাংলার মানুষ। ২০১৬ সালে প্রথম বার সম্মেলনে এসে ২০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছিলেন। আজ তা ২০ গুণ বেড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এই দশক শেষ হতে হতে তা আরও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তিনি। মুকেশ জানান, তাঁদের হাত ধরে বাংলায় ১ লক্ষ প্রত্যক্ষ চাকরি হয়েছে। বাংলার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটেছে।