সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“এটা বিধানসভা। ডিএম অফিস নয়। বিধানসভার নিয়ম অনুযায়ী, অন রেকর্ড প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রস্তাব আপনাকে বাস্তবায়ন করতেই হবে।” এভাবেই বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে শাসকদলের বিধায়ক তথা রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে বিধানসভার নিয়ম শেখালেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সঙ্গেই বাংলার বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করলেন নিরপেক্ষভাবে রাজ ধর্ম পালন করার নয়া নজির।
সোমবার রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রীকে বিধানসভার অধিবেশনে কিছু প্রকল্প বিষয়ক প্রশ্ন করেছিলেন বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতো। কিন্তু বিধানসভায় উত্তর না দিয়ে উত্তর এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী। তবে শাসক দলের বিধায়ক বলে কোন পক্ষপাতিত্ব না করে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে পর্যটনমন্ত্রীকে সরাসরি নির্দেশ দিলেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ।
আজ, সোমবার তখনও শুভেন্দু অধিকারী অথবা অগ্নিমিত্রা পালকে সাসপেন্ড করা নিয়ে বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিজেপি বিধায়করা তখনও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাগজ ছুঁড়ে মারেননি। ওই পরিবেশে বিধানসভায় পর্যটন নিয়ে একটি প্রশ্ন করেন বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতো। জবাবে ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে গেলে জেলাশাসকের মাধ্যমে আসতে হবে।’ তখনই নিরপেক্ষ শিক্ষকের মতো স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিধানসভার নিয়ম অনুযায়ী, অন রেকর্ড প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রস্তাব আপনাকে বাস্তবায়ন করতেই হবে। এটা বিধানসভা, ডিএম অফিস নয়। বিধানসভার একটা মর্যাদা আছে। তাই যেটা দরকার সেটা করতেই হবে। কোনও বিধায়ক প্রশ্ন করলে সেটার উত্তর বিধানসভাতেই দিতে হবে।’
এমনটা যে শুনতে হবে সেটা ভাবতে পারেননি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। তিনি রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি-সহ পর্যটন দফতরের মন্ত্রী। তাই বিরোধী বিধায়কের পর্যটন নিয়ে প্রশ্নের উত্তর তাঁকেই দিতে হবে। বিধানসভার অধ্যক্ষের সরাসরি পাঠ শুনে পর্যটন ক্ষেত্র নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই নানা তথ্য দিয়ে দেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। এই বিষয়ে বিধানসভায় মন্ত্রী জানান, ৭১ কোটি টাকার পর্যটন প্রকল্প বাংলায় হতে চলেছে। আপাতত সেখানে ৭০টি প্রকল্পের কাজ নেওয়া হয়েছে। আর ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা তাতে লগ্নি হতে চলেছে। কদিন আগের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে এই নিয়ে মৌ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আর কিছু জানার থাকলে তিনি নিশ্চয়ই জবাব দেবেন।
বাংলায় পর্যটন কেন্দ্রের উন্নতি ঘটেই চলেছে। আর সেই শংসাপত্র খোদ কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছে। তার উপর দিঘায় জগন্নাথ মন্দির হচ্ছে। অন্যান্য জেলাতেও পর্যটনের উন্নতি ঘটেছে। এবার যে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। সেটা জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে পর্যটনও আছে। সুতরাং পাহাড় থেকে সমতল-সর্বত্র পর্যটনের উন্নতি ঘটেছে। আরও কাজ করা হবে। এবারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ২১২টি মৌ চুক্তি সাক্ষর হয়েছে।