সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“মহাকুম্ভ এখন মৃত্যুকুম্ভে পরিণত হয়েছে।” বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য ঘিরে দেশ জুড়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাপানউতোর এখনো অব্যাহত। তবে তার মধ্যেই মহাকুম্ভে যাওয়ার পথে আরো একবার মৃত্যুমুখে পতিত হলো বাংলার পুণ্যার্থীরা। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতরা হুগলির কামারপুকুরের বাসিন্দা। তাঁরা একটি গাড়িতে চড়ে প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার গভীর রাতে তাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ধানবাদের জিটি রোডে রাজগঞ্জের ডালুডিহের কাছে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এসইউভি-তে চালক ছাড়া তিন জন মহিলা যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার জেরে চালক-সহ চারজনেরই মৃত্যু ঘটেছে। প্রশাসন সূত্রে এই খবর পাওয়ার পরেই মৃত পুন্যার্থীদের উদ্দেশ্যে শোক জ্ঞাপন করে আহতদের চিকিৎসার জন্য তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী
দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নিজের এক্স হ্যান্ডেল সাবেক টুইটারে তিনি লেখেন, “মহাকুম্ভে যেতে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত ছয়জনের পরিবার-পরিজনকে আমি সমবেদনা জানাই। রাজ্যে তাদের দেহ নিয়ে আসতে মৃতদের পরিবারকে সম্পূর্ণ রূপে সাহায্য করতে প্রস্তুত রাজ্য সরকার।”
কিভাবে ঘটল দুর্ঘটনা
ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের রায়গঞ্জ থানা এলাকায় ঘটেছে এই দুর্ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে খবর, রাস্তার ধারে একটি লরি দাঁড়িয়ে ছিল। পুণ্যার্থীদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাতেই ধাক্কা মারে। গতি বেশি থাকায় গাড়িটি প্রায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ওই গাড়িতে ছিলেন ৮ জন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চারজনের। তাঁরা প্রত্যেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। মৃতদের তিনজন থাকতেন হুগলির কামারপুকুরে।
শুধু একটি গাড়ি নয়, অন্য একটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুর্ঘটনা। আসলে পুণ্যার্থীদের গাড়ির পিছনে ছিল আরও একটি গাড়ি। লরির পিছনে পুণ্যার্থীদের গাড়ি ধাক্কা মারার পর অন্য গাড়িটি তার পিছনে ধাক্কা মারে। তাতেই ওই গাড়ির সকলে গুরুতর আহত হন। পরের গাড়িতে ছয়জন ছিলেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার কবলে পড়া সকলকেই উদ্ধার করে আনা হয়েছিল, তবে চারজনের মৃত্যু ঘটেছিল আগেই। বাকিদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। নিহতদের নাম প্রণব সাহা, তাঁর স্ত্রী শ্যামলী সাহা, শালী পিয়ালি সাহা। সেই গাড়ির চালক শেখ রজন আলি। মৃত্যু হয়েছে আরও দুই নাবালক ও নাবালিকার। জানা গিয়েছে, শেখ রজন ও পিয়ালি সাহা আবার হুগলির বাসিন্দা ও বাকিরা পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার বাসিন্দা।

ইতিমধ্যে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কদিন আগেই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের অযোধ্যা গ্রাম থেকে একই পরিবারের ৮ জন গাড়ি করে মহামুম্ভে পুণ্যস্নানের উদ্দেশে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। সেই ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়। এর আগে পুণ্যস্নান সেরে কুম্ভ থেকে বাংলায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল পুণ্যার্থীদের গাড়ি।