সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
এসএসসি (SSC) মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেও শেষ পর্যন্ত স্বস্তি পেল না রাজ্য সরকার। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় চাকরি পাওয়া ২৫ হাজার ৭৫২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। বৃহস্পতিবারের রায়ে শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের আগের রায়কেই সমর্থন জানিয়েছে।
আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, এই মামলায় যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদাভাবে বাছাই করা সম্ভব নয়।
শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি চলাকালীন, এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই (CBI) হাইকোর্টের ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের নির্দেশকে সমর্থন জানিয়েছিল।
রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেন, ”এর জন্য সরাসরি দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার। যদি তাঁর সরকার যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করতে পারত, তাহলে আজ যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরি হারাতে হত না।” তিনি আরও জানান, আগামী দিনে এই চাকরি বাতিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে পথে নামবে বঙ্গ বিজেপি। রমনবমী শেষ হলেই পূর্ণ শক্তিতে তাঁরা প্রতিবাদ জানাবেন বলে ঘোষণা করেন সুকান্ত মজুমদার।
অন্যদিকে, সিপিএম (CPIM) নেতা সুজন চক্রবর্তী এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ”এক বছর পেরিয়ে গেল, সরকার চিহ্নিত করতে পারল না কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য? কত টাকা খেয়েছে? কিছু অযোগ্য এবং অপদার্থ, যাদের টাকা দিয়ে চাকরিতে ঢুকিয়েছে রাজ্য সরকার এবং শাসকদল, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য আজ যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করতে হল? সরকার কি অযোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়েছে? যোগ্যদের পাশে কি সরকার দাঁড়ায়নি?”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা হাইকোর্টে প্রথম এই নিয়োগে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। ৮১৬৩টি কারচুপির সুপারিশের অভিযোগ ওঠে। সিবিআই-এর প্রাক্তন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, এসএসসির শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর এপ্রিল মাসে কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেল বাতিল করে দেয়। এর ফলে একাদশ-দ্বাদশ, নবম-দশমের শিক্ষক এবং গ্রুপ ডি ও গ্রুপ-সির কর্মী সহ মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি চলে যায়। হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সহ একাধিক পক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয় এবং আজ সেই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করল শীর্ষ আদালত।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে। ফলে চাকরি যায় ২৫ হাজার ৭৫২ জনের। যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন এবং যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের ১২ শতাংশ সুদ-সহ বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে, ওই বছরই ২৪ এপ্রিল, সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার, SSC এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় চাকরিহারাদের একাংশও। সেই মামলায়, ২০২৪-এর ৭ মে, সুপ্রিমকোর্ট জানিয়ে দেয়, আপাতত ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের মধ্য়ে কারও চাকরি যাচ্ছে না। কাউকে সুদ-সহ বেতন ফেরাতেও হচ্ছে না। এরপরই গত ১০ ফেব্রুয়ারি, শীর্ষ আদালতে শেষ হয় এই মামলার শুনানি। অবশেষে রায় ঘোষণা করল শীর্ষ আদালত।