সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
সময়ে ওষুধ না পেয়ে মৃত্যু বিরল রোগে আক্রান্ত তিন বছরের শিশুকন্যার। আট মাস অপেক্ষার পরও মেলেনি মহার্ঘ ওষুধ। অভিযোগ, তারই জেরে গত ৩০ মার্চ মৃত্যু হয় গাউচার ডিজিজে আক্রান্ত ব্যারাকপুরের বাসিন্দা অনুশ্রী ধরের (৩)। তিন বছরের শিশুকন্যার মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে রাজ্যে বিরল রোগ নীতি প্রণয়ন।
বিশেষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তহবিল রয়েছে, তারপরও সময় মতো পাওয়া গেল না মহার্ঘ্য ওষুধ! আর, তার জেরেই প্রাণ হারাতে হল একরত্তি শিশুকে। ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-কেই দায়ী করছেন ওই শিশুর বাবা- মা। জানা গিয়েছে, যে শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তার নাম – অনুশ্রী ধর।
মাত্র ৩ বছর বয়সেই প্রাণ হারাতে হল অনুশ্রীকে। সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য অনুসারে, ছোট্ট অনুশ্রী এক বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল। যার নাম – গাউচার ডিজিজ।
তথ্য বলছে, এটি একটি জিনঘটিত বিরল ব্যধি। যা মূলত পারিবারিক বা উত্তরাধিকার সূত্রে কোনও ব্যক্তির শরীরে বাসা বাঁধে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগকে বলা হয় – লাইসোসোমাল স্টোরেজ ডিসঅর্ডার (এলএসডি)। এটি গ্লুকোসেরেব্রোসিডেস (Glucocerebrosidase) নামক এনজাইমের অভাবের কারণে ঘটে। যার ফলে চর্বিযুক্ত পদার্থ (গ্লুকোসেরেব্রোসাইড) মানবদেহের অস্থি মজ্জা, লিভার এবং প্লীহায় জমা হতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যধি বিরল হলেও সময় মতো ওষুধ পাাওয়া গেলে অসুখ সেরে যায়। কিন্তু, অনুশ্রী সময় মতো ওষুধ পায়নি বলে অভিযোগ উঠছে। আর, সেই কারণেই তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
অনুশ্রীর পরিবার ব্যারাকপুরের বাসিন্দা। ছোট্ট মেয়েকে হারানোর পর তার বাবা-মা (বিপ্লব ধর ও শিখারানি ধর) রাজ্যে বিরল রোগ সংক্রান্ত নীতির প্রণয়ন নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁরা জানিয়েছেন, গত প্রায় সাত-আটমাস ধরে তাঁরা মেয়ের ওষুধের জন্য অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু সেই ওষুধ তাঁরা পাননি।
অনুশ্রীর বাবা-মা জানিয়েছেন, তাঁদের মেয়ের জন্য প্রথমবার গত বছরের (২০২৪) সেপ্টেম্বর মাসে এসএসকেএম-এর মেডিক্যাল বোর্ডের দ্বারস্থ হন তাঁরা। এমনকী, গত ৩ মার্চ (২০২৫) থেকে এসএসকেএম-এরই অ্যানেক্স পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল অনুশ্রী। অভিযোগ, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি না দিয়েই সেখান থেকে অনুশ্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সন্তানহারা বাবা-মায়ের অভিযোগ, এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্যই তাঁদের মেয়েকে হারিয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে – সারা দেশে মোট ১২টি উৎকর্ষ কেন্দ্র (সেন্টার অফ এক্সিলেন্স) রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে বিরল রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এই ব্যবস্থাপনার অধীনে বিরল রোগে আক্রান্ত প্রত্যেক শিশুর জন্য বরাদ্দ থাকে ৫০ লক্ষ টাকার তহবিল। পূর্ব ভারতে সেই উৎকর্ষ কেন্দ্র রয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে।
শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন অনুশ্রীর বাবা বিপ্লব ধর। অনুশ্রীদের বাঁচাতে বিরল রোগ নীতি প্রণয়নে আন্তরিক হওয়ার আর্জি করছেন চিকিৎসকরাও। মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র বলছেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। সার্বিকভাবে মানুষকে যদি মানুষ হিসাবে না দেখে ভোটার হিসাবে দেখি তাহলেই এই বিপত্তিটা হবে।

মানুষ্যত্বের দিক থেকে দেখুন, এটাই সরকারের কাছে মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের আবেদন।” বিরল রোগ নীতি প্রণয়নের কো-অর্ডিনেটর দীপাঞ্জনা দত্ত বলছেন, “গাউচার ডিজিজ একটা জিনগত সমস্যা। ওষুধ পেলে বাচ্চারা বেঁচে যায়। অনুশ্রীর জন্যও আমরা ওষুধের অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ওষুধ না পেয়ে ও চলে গেল।” ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপি চিকিৎসক নেতা শারদ্বত মুখোপাধ্যায়।
তিনি বলছেন, “এই রাজ্য সরকার তো কাজকর্ম প্রায় ভুলেই গিয়েছে। ভাত ঘুমেই ব্যস্ত। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরল রোগের জন্য ফান্ড রেডি। রাজ্য সরকারের চিঠি চালাচালি করতেই গিয়েই প্রাণটা চলে গেল বাচ্চাটার।”