সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
দীঘায় আগামী ৩০ এপ্রিল জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দিনে কাঁথিতে সনাতন হিন্দু ধর্ম সভা আয়োজনের জন্য আমি কোন মামলা দায়ের করিনি। মামলার শুনানি সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরে খোদ মামলাকারীর মুখে এমন বক্তব্য শুনে হতবাক কলকাতা হাইকোর্ট। প্রায় নজিরবিহীন এমন ঘটনায় জরুরী ভিত্তিতে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরীতে মামলাকারীর হাতের লেখা ও সই পরীক্ষার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত প্রায় এক বছর আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন এ বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন অর্থাৎ 30 এপ্রিল দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে BJP নেতা শুভেন্দু অধিকারী কাঁথি থেকে ঘোষণা করেন, জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দিন এই কাঁথিতে সনাতনী হিন্দু ধর্ম সভা আয়োজন করা হবে। কিন্তু রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে এই ধর্মসভা আয়োজনের দিন পরিবর্তন করতে অনুরোধ করে ৩০ শে এপ্রিল ধর্মসভার অনুমতি বাতিল করা হয়। এর পরেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় একটি ধর্মীয় সংগঠন। সেই মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাশে।
জানা গিয়েছে, মিছিলের অনুমতি চেয়ে ডিএম, পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠান হিন্দু সংঘঠনের সভাপতি রামেশ্বর বেরা। সেই সভার অনুমতি না পাওয়ায় রামেশ্বর বেরা-সহ পাঁচজন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। মামলা চলাকালীন তিনি দাবি করেন ওকালতনামাতে তাঁর হয়ে অন্য কেউ সই করেছে। এই মামলা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। বিস্ফোরক এই দাবি শোনার পরে রীতিমত চমকে ওঠেন বিচারপতি। এই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখার জন্য কাঁথিতে হিন্দু মহাসম্মেলন সংঘঠনের সভাপতি রামেশ্বর বেরা সই করা ওকালত নামা-সহ সমস্ত কাগজপত্র দিল্লি সিএফএসএল-এ পাঠানোর নির্দেশ দিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। সেখান থেকে রিপোর্ট এলেই পরিবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান বিচারপতি।
তবে তার আগে মামলার শুনানি চলাকালীন আদালতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ রাজ্যের কাছে জানতে চান যে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কত মানুষ যাবেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রায় এক লক্ষ মানুষের সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, কাঁথির ধর্ম সম্মেলনে ধাপে ধাপে ৫০,০০০ মানুষ যাবেন বলে মামলাকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
রাজ্যের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, মামলাকারীরা এই পুজো তাদের বাড়িতে করতে পারেন না? বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তখন জানতে চান, ২০০০ মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠান করলে কী অসুবিধা? এর জবাবে রাজ্য বলে, কে মানুষ গুণে রাখবেন?
রাজ্যের পক্ষ থেকে আরও যুক্তি দেওয়া হয় যে, জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং একই দিনে কাছেই এত বড় আর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সমস্যা হতে পারে। বিচারপতি ঘোষ বলেন, ধর্মীয় কোনও অনুষ্ঠানে আমরা কী করে না করতে পারি?
এর জবাবে রাজ্য স্পষ্ট দাবি করে যে, এই অনুষ্ঠানটি ধর্মীয় কারণে নয়, বরং সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। কারা এই অনুষ্ঠানের প্রকৃত ব্যবস্থা করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য। রাজ্য সরকারের সওয়াল, ৪-৫ জন গ্রামবাসী মিলে এত বড় অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করছেন, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তারা কোথা থেকে এই টাকা পাবেন? তাদের টাকার উৎস কী?
এরপরই রাজ্য সরাসরি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলে, এর পিছনে শুভেন্দু অধিকারী আছেন। তিনি পিছনে আছেন কেন? তাঁকে সামনে আসতে বলুন। রাজ্যের স্পষ্ট দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশাসনকে অসুবিধায় ফেলার জন্য একই দিনে এই কর্মসূচি করার চেষ্টা হচ্ছে।