শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“আসল হিন্দুরা কেউ যাননি, মুর্শিদাবাদে নকল ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন মমতা।” মুর্শিদাবাদের সরকারি সভা থেকে নকল ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিলি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুর্শিদাবাদে হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মানবাধিকার কমিশনের সামনে ধরনা মঞ্চ থেকে এমনই দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় মুর্শিদাবাদে বাহিনীর গুলিতে নিহত যুবকের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। সেই সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “কোনও প্রকৃত হিন্দু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দান খয়রাতি নেবেন না। আর আমরা হাইকোর্ট থেকে প্রত্যেকের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেব।”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “গত মাসে প্রথমে মোথাবাড়ি, পরে ধূলিয়ান ও সামসেরগঞ্জে বেছে বেছে হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর, আগুন, লুঠপাট ও একাধিক মন্দির ভাঙা হয়েছে। আমি মুর্শিদাবাদের পীড়িত হিন্দুদের কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আজ মুখ্যমন্ত্রীর দান খয়রাতি অগ্রাহ্য করেছেন। ৯০০র বেশি পরিবার, মাত্র ৪০ জনকে জোগাড় করে পুলিশ তোলামূল, নকল ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে কিছু টাকা দিয়েছেন। আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঙ্গাবাজ গুলিতে মরেছে তাকেও শহিদের মর্যাদা। দাঙ্গা করতে এসেছিল। পুলিশ ও বিএসএফ প্রাণে বাঁচার জন্য গুলি করেছিল। হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাস আর দাঙ্গাকারী এক? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হরগোবিন্দ দাসের পরিবারকে চাকরি দেবেন বলেছে। আমি বলছি, আমি ওদের চাকরি দেব। দেখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে কী ভাবে রোখেন?”
মঙ্গলবার সুতিতে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মমতা। সেখান থেকে শহিদ জওয়ানের স্ত্রী ও ছেলের হাতে ১০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। তবে এর আগে দেখা গেছিল, ওয়াকফ ইস্যুর অশান্তির জেরে যাদের মৃত্যু হয়েছিল জেলায় সেই হরগোবিন্দ এবং চন্দন দাসের পরিবারের সরকারের দেওয়া ক্ষতিপূরণের টাকা নেয়নি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, এমন ঘটনায় বোঝা যায় একাংশ মুখ্যমন্ত্রীকে বয়কট করেছে। মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, অনেকেই জেলা ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু যারা আছেন তাদের সঙ্গেই তিনি দেখা করবেন, ক্ষতিপূরণ দেবেন। তবে কেউ তা না নিলে কিছু করার নেই। মঙ্গলবার সল্টলেকে মানবাধিকার কমিশনের অফিসের সামনে ধর্না-বিক্ষোভে সামিল হয়ে শুভেন্দু মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, ”হরগোবিন্দ এবং চন্দন দাসের পরিবার সরকারের ক্ষতিপূরণের টাকা নেননি। তবে আমাদের তরফে এনজিও-র মাধ্যমে যে ১০ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছিল তা তাঁরা গ্রহণ করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন কারা আসল হিন্দু। আর মুখ্যমন্ত্রীর ১৪ বছরের রাজত্বে এই প্রথমবার তিনি বয়কট হয়েছেন হিন্দু সমাজের দ্বারা।”
এর পাশাপাশি মঙ্গলবারের কর্মসূচি থেকে লম্বা লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী সাফ জানিয়ে দেন, যে লড়াই তাঁরা শুরু করেছেন তা অনেক দূর পর্যন্ত যাবে। সকলকে টিকে থাকতে হবে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কথায়, পছন্দের লোকজনদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ সফরে গেছেন। কিন্তু তাঁরা কোনও লোক ভাড়া করেন না। গাড়ি গাড়ি করে টাকা দিয়ে লোক আসে না তাঁদের সভায়। যারা আদতে পীড়িত, অত্যাচারিত তাঁরা এই তৃণমূল সরকারের বিরোধিতায় একজোট হয়েছে। তাঁদের জন্যই বিজেপি লড়াই করছে এবং করবে।