রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
একদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার দাপট, অন্যদিকে আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রূণ তৈরি হওয়া এবং মৌসুমী বায়ুর দ্রুত অগ্রসর হওয়া – সব মিলিয়ে আবহাওয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। বুধবার সকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।
এর মধ্যেই আবহাওয়া বিভাগ ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে।
বাংলার বৃষ্টি ও বেঙ্গালুরুর জলমগ্নতা:
বুধবার সকাল থেকে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আকাশ কালো করে আসে এবং শুরু হয় ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া। বহু জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহও ব্যাহত হয়েছে। শহরের নিচু এলাকাগুলোতে জল জমে সমস্যা তৈরি হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে বেঙ্গালুরুতে। মঙ্গলবার সেখানে ভারী বৃষ্টির ফলে শহরের বহু রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত জল জমে যায়, যার জেরে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র সম্ভাবনা:
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD) জানিয়েছে, আন্দামান সাগরের উপর ১.৫ কিলোমিটার থেকে ৭.৬ কিলোমিটার উচ্চতায় একটি উচ্চতর বায়ু ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করছে। এটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করছে এবং আগামী ১৬ থেকে ২২ মে-র মধ্যে এটি একটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই নিম্নচাপটি ২৩ থেকে ২৮ মে-র মধ্যে আরও শক্তিশালী হয়ে ‘শক্তি’ নামে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হলে উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে উপকূলবর্তী রাজ্যগুলো এবং মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
এগিয়ে আসছে মৌসুমী বায়ু:
আবহাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ইতিমধ্যেই দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশে প্রবেশ করেছে। IMD জানিয়েছে, আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে এটি দক্ষিণ আরব সাগর, মালদ্বীপ, কোমোরিন অঞ্চল এবং বঙ্গোপসাগরের আরও কিছু অংশে অগ্রসর হবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবারের মৌসুমী বায়ু সাধারণত ১ জুনের নির্ধারিত সময়ের আগেই, সম্ভবত ২৭ মে-র মধ্যে কেরালায় পৌঁছে যেতে পারে।
গত এপ্রিল মাসে IMD জানিয়েছিল, ২০২৫ সালের বর্ষাকালে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এল নিনোর মতো পরিস্থিতি এবার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এটি দেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পূর্বাভাস।
অন্যান্য অঞ্চলের আবহাওয়া:
কর্ণাটকের বিভিন্ন জেলায় আবহাওয়া বিভাগ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। এই সময়ে সেখানে প্রাক-মৌসুমি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। কলকাতার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সব মিলিয়ে, আবহাওয়া দফতর একদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে সতর্ক করলেও, অন্যদিকে মৌসুমী বায়ুর আগমনের ইতিবাচক পূর্বাভাস দেশের মানুষের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।