শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“আজ যে নোটিফিকেশনের বার্তা উনি দিলেন, এটা পরিষ্কার সমস্ত যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের জন্য একটা মৃত্যুপরোয়ানা উনি ঘোষণা করলেন। আমরা কখনো চাইনি নোটিফিকেশন দিক। কিন্তু, আজ আমরা ওঁর মুখ থেকে নোটিফিকেশনের বার্তা শুনলাম।” নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নতুন করে পরীক্ষার ঘোষণা করার পরেই এভাবে নিজেদের হতাশা ব্যক্ত করলেন চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা।
আজ নবান্নে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “৩১ মে-র মধ্যেই আমরা সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার অনুযায়ী নোটিফিকেশন করব। বিজ্ঞপ্তি আমাদের করতে হবে ৩০ মে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই চাকরিহারা শিক্ষকদের তরফে রাকেশ আলম, হাবিবুল্লা, বৃন্দাবন ঘোষ দাবি করেন, বিজ্ঞপ্তি জারির আগে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান। রাকেশরা বলেন, “দুর্নীতি এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা এ দিন দেখতে পেলাম। রিভিউ-এ লড়তে হবে এবং চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। সরকারের যোগ্যদের বাঁচানোর আরও জায়গা ছিল। সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফের পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া অসম্ভব। বিজ্ঞপ্তি জারির আগে যাতে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় সে জন্য আগেও আমরা আবেদন করেছিলাম। আমাদের ছাত্রদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে হবে। ২, ৩ মাস পড়ে তা সম্ভব নয়। একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। যেমন ওবিসি মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। সেক্ষেত্রে ওবিসিদের জন্য আলাদা কোনও ছাড় আদৌ দেওয়া হবে কি না।” সুপার নিউমেরিক পোস্ট অর্থাৎ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে তাঁদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথাও এ দিন শোনা যায় চাকরিহারাদের কণ্ঠে।
নতুন করে পরীক্ষায় বসতেই হবে চাকরিহারা শিক্ষকদের। ৩০ মে হবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ। নতুন করে পরীক্ষায় বসার কথা নিজেই ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, “৩১ মে-র মধ্যেই আমরা সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার অনুযায়ী নোটিফিকেশন করব। বিজ্ঞপ্তি আমাদের করতে হবে ৩০ মে। ১৬ জুন পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। এর জন্য শেষ তারিখ ১৪ জুলাই। প্যানেল প্রকাশ হবে ১৫ নভেম্বর। কাউন্সেলিং ২০ নভেম্বর।” সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশ মেনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং রিভিউ পিটিশন দু-দিকই খোলা রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সবটাই রেডি করে রাখব। যদি রিভিউয়ে বলে আপনাদের পরীক্ষা দিতে হবে না। আপনাদেরটা গ্রহণ করা হল। লিস্ট বাতিল করা হল না। তাহলে আমরা নিশ্চয়ই সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনব। রিভিউ পিটিশনও চলবে, আর আমাদের প্রক্রিয়াটাও ৩১ মে-র মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলা হয়েছে।”
এই ঘোষণার পরপরই চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিনিধি বলেন, “উনি যে সুপ্রিম কোর্টের জাজমেন্টের কথা বললেন… সুপ্রিম কোর্টের জাজমেন্টে এত ডিটেল নোটিফিকেশন দেওয়ার কথা বলা হয়নি। আমাদের আশঙ্কা ছিল, সরকার হয়তো আমাদের পরীক্ষার দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। সেক্ষেত্রে এই ডিটেল নোটিফিকেশন দেওয়া …আমাদের আশঙ্কাটা বরাবরই থেকে যাচ্ছে…সমস্ত যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের রিভিউয়ের মধ্যে দিয়ে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমরা যে গাফিলতিটা দেখছিলাম, সেই আশঙ্কাই মনে হচ্ছে সত্যি হয়ে যাচ্ছে। আমরা কোনওভাবেই চাইনি, নোটিফিকেশন দিক। নোটিফিকেশনের আজকের ডিটেলে বলা হল, অনলাইন আবেদনের তারিখ, পরীক্ষা-ফলাফল-কাউন্সেলিংয়ের তারিখ, এত কিছু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা ছিল না। অর্থাৎ আমরা মনে করি, শুধুমাত্র রায়টাকে অনুসরণ করার জন্য এত ডিটেল বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আমাদের কোনও এক জায়গায় মনে হচ্ছে, সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে। যোগ্যদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সেই সদিচ্ছার অভাব আমরা দেখছি। আজ আমরা বলব, নেতাজি ইনডোর স্টে়ডিয়ামে যে মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা দেখেছিলাম, আজকের মুখ্যমন্ত্রী সেই দিনের থেকে আলাদা।”

শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ চাকরিহারারা
নতুন করে পরীক্ষায় বসতে চাননা এই চাকরিহারা শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি, কোনও রকম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তাঁরা। তাই শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চলেছেন তাঁরা। এই নিয়ে ব্রাত্য বসুকে চিঠি দিচ্ছেন তারা।