শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন। সন্দেশখালি।
“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালকে বলছেন শাহজাহানের মাঠ থেকে। রেখা-মাম্পিরা না বেরলে ওই মাঠটা শাহজাহানের নামেই থাকত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনি শিবু-শাহজাহানদের বলেছেন ভুলে যেতে? এতদিন অত্যাচার হয়েছে এখানে, মহিলাদের উপর অত্যাচার এগুলো ভুলে যান? এই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ভুলে যেতে। কে দুষ্টু লোক মাননীয়া ? সব চেয়ে বড় দুষ্টুলোক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” সন্দেশখালীর মাটিতে দাঁড়িয়ে সোমবার মমতা দুষ্টু লোকেদের খপ্পরে না পড়ার যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এভাবেই পাল্টা আক্রমণ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সন্দেশখালি তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের উপরে হামলা এবং তারপর থেকে সন্দেশখালি ঘিরে একের পর এক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে গতকাল সোমবার সন্দেশখালীর মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপি এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দু অধিকারী আগেই ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পাল্টা জনসভা করবেন সন্দেশখালিতে। কিন্তু আজ সকালেই শুভেন্দুর জনসভার জোনে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানা যায় রাজ্য পুলিশের তরফে। কিন্তু রাজ্য পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী জনসভা করেন শুভেন্দু। আর সেখান থেকেই মমতাকে একের পর এক আক্রমণ ছুঁড়ে দেন বিরোধী দলনেতা।
সন্দেশখালির সভা মঞ্চ থেকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “উনি এসেছিলেন। কোনও সন্দেশখালি দ্বীপের লোক যাননি। অনেক লোভ দেখিয়ে সভায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। আকাশরানি এসেছিলেন। ৭ হাজার পুলিশ কাল এসেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্ষশেষের উৎসবের খবর ৩ কোটি। আপনার আমার জনগণের টাকা। আমি এসেছি আপনারা কেমন আছেন দেখতে। উনি কাল এসে অপবিত্র করে গিয়েছেন। আমি এসেছি পবিত্র করতে। ওম শান্তি।”
মঙ্গলবার সন্দেশখালীর জনসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বদলা নেব। আইন মেনে বদলা নেব। আমায় হারাতে গেছিল কলকাতা থেকে। আমি হারিয়ে পাঠিয়েছি। এবার আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। উনি ধার করে টাকা দিচ্ছেন না। চাকরি নেই। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ১০০০ টাকা। আপনি জেনে রাখুন এক কোটি টাকা দিলেও কোনও হিন্দু ভোট দেবে না। এত চুরির পরও লোকসভা ভোটে এই বাংলায় ৩৯ শতাংশ হিন্দু বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। আর ৫ শতাংশ হিন্দু সিপিএম তৃণমূল ছেড়ে বা ভোট দিতে না যাওয়া হিন্দু যদি ভোট দেন তাহলেই ওপারে ইউনূস যাহা এপারে মমতা তাহা আমার কাছে হেরেছেন। এবার আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বানাবেন। আর জঙ্গি-জিহাদিদের এ বাংলা থেকে উত্তরপ্রদেশের মতো সাফ করবেন। বাংলাদেশে কী হচ্ছে জানেন তো? মহিলারা কি শাঁখা-পলা পরতে পারছে? পুরুষরা মাথায় তিলক রাখতে পারছেন? তুলসী মঞ্চ আছে? তাহলে এক থাকতে হবে। ওপারে ইউনুস যাহা এপারে মমতা তাহা। মাথায় ঢুকছে?”
অন্যদিকে সন্দেশখালীর আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার জন্য মমতা চক্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ তুলে সকলকে মমতা এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এসডিপিও ছিল আমিনুল। আমার পায়ের উপর জুতো দিয়ে আঙুল থেঁতলেছে। পাঁচবার আটকেছে সায়েন্স সিটির কাছে। ধামাখালিতে তিনবার রুখেছি। হাইকোর্টের রায়ের জন্য হাততালি দিন। আমিও ভুলব না। এ রাজ্যে বিজেপি সরকার হলে সন্দেশখালির ঘটনায় কমিশন বসবে। আর যে মহিলাদের জেল খাটিয়েছেন, তাঁদের মিথ্যা মামলায় জেল খাটানোর জন্য বিজেপি মমতাকেও জেলে পাঠাবে। অসুস্থ শরীরে বিকাশ দা এসেছেন। ওঁকে সুস্থ করার দায়িত্ব আমার। বিকাশ দা-কে জেল খাটিয়েছে। তবে হাইকোর্ট বসিরহাট পুলিশের দুই কান মুলে দিয়েছে। মাম্পিকেও তাই করেছিল। কে জেল খাটেনি?
সাংবাদিকদের ছাড়েনি। আপনাদের জন্য অনেকে লড়েছেন। আমি আর সুকান্তবাবু দিল্লির জওহরলাল নেহেরুতে আপনাদের জন্য বক্তব্য রেখেছি। গোটা ভারত আপনাদের লড়াইকে শ্রদ্ধা করে। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার সন্দেশখালির কথা তুলে ধরেছেন। তাপস ঘোষ, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, রেখা পাত্ররা সাতদিন থাকেন এখানে। জানেন তো রেখা মামলা করেছে। হাজী নুরুলের মনোনয়ন ত্রুটি যুক্ত। একই গাউন্ডে বীরভূমের দেবাশীষ প্রার্থী বাদ দিয়েছ। মমতার পোষ্য বাদ দিয়েছিল। কয়েকদিন আগে শুনানি ছিল। রাজ্য সরকার হলফনামা জমা দিতে গিয়েছিল। বিচারপতি হলফনামা বাতিল করে ক্ষমা চাইয়েছে কোর্টে। পরের শুনানি ১৫ই জানুয়ারি। নিশ্চিন্তে থাকুন সাংসদ বিজেপির হবে। আপনারা এক থাকবেন তো? ধর্ম পরিবর্তনের ইচ্ছা আছে? ওপারে রতন মজুমদার চাকরি বাঁচাতে ধর্ম পরিবর্তন করেছেন। ওঁর নাম হয়েছে শেখ শফিউল্লা। উনি চাকরি ছাড়তে পারেননি। ধর্ম ছেড়েছেন। ওই ১ লক্ষ টাকা ২০ হাজার টাকায় ঘর হয় না। বিজেপি এলে ৩ লাখ টাকার ঘর বানাব। সঙ্গে শৌচালয়। সৌর আলো। ইলেট্রিক বিল দিতে হবে না। তাই আর ১৫ মাস ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আর তারপর লাইন দিয়ে পদ্মফুলে ভোট দিতে হবে।”