সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
বিক্ষোভে উত্তাল বিধানসভা। ওয়াকআউট করল বিজেপি। বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ। নারী নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ওয়াক আউট করে বিজেপি। এই মুহূর্তে বিধানসভার বাইরে এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিজেপি বিধায়করা।
বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘আরজি করের ঘটনার পরেও আমাদের রাজ্যে নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন চলছেই। শারীরিক অত্যাচার ও খুন ক্রমবর্ধমান। এর বিরুদ্ধে আমাদের মহিলা বিধায়করা এদিন বিধানসভায় একটি মুলতুবি প্রস্তাব জমা করেন। এই মুলতুবি প্রস্তাবের ভাষ্যে এডিটেড পার্ট তাঁদেরকে পড়তে দেওয়া হয়। কিন্তু আলোচনার সুযোগ রাখা হয় না। আমাদের বিধায়ক তাপসী মণ্ডল, শিখা চট্টোপাধ্যায়, মালতি রাভা, চন্দনা বাউড়ি সবাই মিলে যখন প্রতিবাদ করেন, তখন তাপসী মণ্ডলের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।” তাঁর বক্তব্য, “আসলে তাপসী মণ্ডলের যে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেটা আসলে পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য মহিলা ও শিশুদের কথা বলার মাইক ছিল। তাঁদেরই কন্ঠরুদ্ধ করা হয়েছে।” তাঁর কথায়, স্পিকারের এই আচরণের প্রতিবাদ করতেই তাঁরা ওয়াক আউট করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে শঙ্কর বলেন, “আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরই বলেছিলেন, বিরোধীদের মুখে সেলোটেপ মেরে দিতে। এদিন স্পিকার সেটাই করেছেন। এটা তো মুখ্যমন্ত্রীর আচরণেরই ভাষ্য।”
যদিও বিধানসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে এডিটেড ভার্সনই পড়তে হবে, সেটাই নিয়ম। কিন্তু তাপসী মণ্ডল তার বাইরের অংশ পাঠ করছিলেন বলে সেটা রেকর্ড না করার নির্দেশ দেন তিনি। তাও তাপসী মণ্ডল বলতে থাকলে মাইক বন্ধের নির্দেশ দেন স্পিকার।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই বাংলাদেশে চিন্ময়কৃষ্ণ দাস গ্রেফতারির আঁচ পড়ে বিধানসভায়। প্রতিবাদে সোচ্চার হয় বিজেপি। বিধানসভার বাইরে মিছিলও করেন বিজেপি বিধায়করা। আগামী দিনে কলকাতায় রাস্তায় নামার কর্মসূচিও ঘোষণা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সেই অধিবেশন থেকে স্বাস্থ্যদপ্তরের সমস্ত প্রশ্নের জবাব দেবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। সদ্যসমাপ্ত ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে চলেছেন হেমন্ত সোরেন। বৃহস্পতিবার তাঁর শপথ। তাতে আমন্ত্রিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওইদিন তিনি যাবেন রাঁচি, হেমন্তের শপথে অংশ নিতে। সূত্রের খবর, ওইদিন প্রথমার্ধ্বে বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে তার পর রাঁচি যাওয়ার বিমান ধরবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর জবাবের দিকে নজর বিরোধীদেরও।
অন্যদিকে, ভরা বিধানসভায় বিরোধীদলের সদস্যদের দল বদলের প্রস্তাব দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী! বুধবার অভূতপূর্ব এই ঘটনার সাক্ষী থাকল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। বুধবার বিধানসভায় সংবিধান দিবস নিয়ে আলোচনা চলছিল। কথা প্রসঙ্গে সেখানে সদ্য সমাপ্ত ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়টি ওঠে। তখনই মাদারিহাট কেন্দ্রের ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির বিধায়কদের শাসকদলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান রাজ্যের মন্ত্রী, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম!
সূত্রের খবর, সংবিধান দিবস নিয়ে আলোচনায় শাসক-বিরোধী বিধায়কদের বক্তব্যে রীতিমতো হইহট্টগোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখনই বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পলের উদ্দেশ্যে ফিরহাদ হাকিম ওরফে ববিকে রসিকতার সুরে বলতে শোনা যায়, ‘ উপ নির্বাচনে ৬ এ ৬ পেয়েছি! আপনারাও চলে আসুন, না হলে সিটটা হাতছাড়া হবে!”
ফিরহাদের কটাক্ষের পাল্টা দিয়েছেন অগ্নিমিত্রাও। তিনি বলেন, ”আমার একটা নির্দিষ্ট নীতি এবং আদর্শ রয়েছে। তার জন্যেই আমি বিজেপি করি। ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্যের মাধ্যমে আবার ওঁর পার্টির দখলদারির মানসিকতা প্রকাশ্যে এল। উনি আগে থেকেই জেনে গিয়েছেন, আমি ছাব্বিশের নির্বাচনে হারব! টিকিট যদি পছন্দ না-ও হয়, আমি অন্তত অন্য কারও বাড়িতে গিয়ে তাঁর চালে ঢিল ছুড়ব না। ফিরহাদবাবুকে বলব, আমার দিকে না তাকিয়ে মহিলাদের সম্মান কী ভাবে দিতে হয়, বিরোধী দলের মহিলাদের কী ভাবে সম্মান করতে হয়, সে দিকে নজর দিলে ভাল হবে।”