সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
“আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৫০টি আসনও পাবে না! ২০২১ সালে তো বিজেপির চাকা ৭৭-এ আটকে গিয়েছিল। আমি আপনাদের কথা দিয়ে গেলাম, ২০২৬ সালের লড়াইয়ে এ বার ৫০-এর নীচে থাকবে। আমি ভবিষ্যদ্বাণী করি না। যদি ভবিষ্যদ্বাণী করি, তা ঈশ্বরের কৃপায় মানুষের ভালবাসায় অল্প হলেও মেলে।” এভাবেই আজ বুধবার নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতগাছিয়া থেকে বিরোধীদের খোলা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তৃনমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, “ডায়মন্ড হারবারে কত কাজ করেছি, সব হিসেব দিয়েছি। তৃণমূলের সঙ্গে কুৎসার লড়াই না করে কাজের পরিসংখ্যান দিন। বিরোধী দলের সাংসদরাও রিপোর্ট কার্ড পেশ করুন। ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে অনেকে ব্যঙ্গ করেন। ডায়মন্ড হারবারে ১১ বছরে ৬ হাজার কোটির কাজ করেছি। ভাবছেন ইডি-সিবিআই লাগিয়ে অভিষেককে আটকাবেন। দিল্লির নেতাদের ধরে রাজনীতি করেন। গুজরাতের নেতাদের খুশি করতে মেরুদণ্ড বিক্রি করে দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। আমি বলেছি, পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের। বিজেপির কোনও নেতার ক্ষমতা আছে? গরিব মানুষের টাকা কারা আটকে রেখেছে? প্রতিশোধের রাজনীতি করছে বিজেপি। মানুষ চাইলে ২ সেকেন্ডে অহঙ্কার ভেঙে চূর্ণ হয়ে যাবে। মহেশতলার ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে এসেছিল। বজবজে আটকানোর হয়েছে বলে দিল্লিতে জোড়া চিঠি সুকান্তর। বাংলার বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রকে ক’টা চিঠি দিয়েছেন? মহেশতলায় লাশের রাজনীতি করতে এসেছিল। মমতা সরকার চাকরি দিলে আটকাতে হবে, বাংলার টাকা আটকাতে হবে। যিনি টাকা নিয়েছেন এবং টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, দু-জনই সমান দোষী। আপনি পুরো প্যানেল বাতিল করে দিলেন। বিচারপতির বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, তার মানে গোটা বিচারব্যবস্থা তো দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। দুর্নীতি করল কয়েকজন, আর সবার প্যানেল বাতিল হল। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছে। পহেলগাঁওয়ে ঢুকে জঙ্গিরা ২৬ জনকে মেরে চলে গেল। তাহলে পহেলগাঁও হামলার দায় কার? আইবি প্রধানের ব্যর্থতার জন্যই পহেলগাঁওয়ে হামলা। ব্যর্থতার পরেও আইবি প্রধানের মেয়াদ বৃদ্ধি কেন্দ্রের। আর জি কর কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলে, কেন পহেলগাঁওকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হবে না? কেন মোদি-শাহের পদত্যাগ দাবি করা হবে না? মমতা সরকারকে ছোট করতে বাংলাদেশকে সার্টিফিকেট। বাংলাদেশে সাধু-সন্তদের ওপর অত্যাচার চলছে। এরা নিজেদেরকে ধর্মের রক্ষাকর্তা বলেন। বাংলার টাকা আটকে রেখে, উল্টে বাংলার থেকেই জিএসটি আদায়।”
সাতগাছিয়ায় দলীয় সভা ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে রিপোর্ট কার্ড পেশ করেছেন তিনি। ডায়মন্ড হারবারে কত কাজ করেছেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দেওয়া রয়েছে এই রিপোর্ট কার্ডে, বলেছেন অভিষেক। এই রিপোর্ট কার্ডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’। সাতগাছিয়ার এই সভা থেকেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি একটারাজ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের পরিষেবা চালু করলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন, একথাও শোনা গিয়েছে অভিষেকের মুখে। বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ডায়মন্ড হারবারে ১২ লক্ষ মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা। এবছর আরও বড় আকারে সেবাশ্রয় ক্যাম্প হবে। ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বিজেপি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করতে পেরেছে বিজেপি? তৃণমূলকে টাইট দিতে গিয়ে মানুষকে টাইট দিচ্ছে, বাংলাকে টাইট দিচ্ছে। ডবল ইঞ্জিন সরকার চলছে, দু-একদিন অন্তর একের পর এক বিপর্যয়। কোথাও বিমান দুর্ঘটনা, কোথায় ব্রিজ বিপর্যয়, কোথাও রেল দুর্ঘটনা। দেশের হয়ে বলতেই বিদেশ সফরে গেছিলাম। আমার কাছে সবার আগে দেশ। বাংলার ১ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল, জবাব দাও বিজেপি সরকার।”

এদিনের সভায় অভিষেক বলেন, “বিজেপির নেতারা বলেছেন, বাংলায় ক্ষমতায় এলে ৩০০০ টাকা করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেব। বিজেপি এবং এনডিএ- র সরকার কমপক্ষে এখনও ১০-১৫টা রাজ্যে রয়েছে। অসমে বিজেপি সরকার, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার, ওড়িশায় বিজেপি সরকার, মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকার, ছত্তিসগঢ়ে বিজেপি সরকার, অরুণাচল প্রদেশে বিজেপি সরকার, রাজস্থানে বিজেপি সরকার, বিহারে বিজেপি সরকার, মেঘালয়ে এনডিএ সরকার। আমি বলছি মমতা ব্যানার্জি ২ কোটি ২০ লক্ষ মায়েদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিচ্ছে, একজনও বাকি নেই। বিজেপি বলছে ৩০০০ করে দেব। আমি বলছি অর্ধেক করো। ১৫০০। কটা ক্যামেরা আছে এখানে, ক্যামেরার সামনে আপনাদের সাক্ষী রেখে বলছি। ৩০০০ দিতে হবে না। বিজেপি যদি একটা রাজ্যে করে দেখাতে পারে, অভিষেক ব্যানার্জি রাজনীতি ছেড়ে দেবে। এত বড় কথা বলে দিয়ে গেলাম। একটা রাজ্যে করে দেখাক।”