কলকাতা হাইকোর্টে রোজভ্যালি কেলেঙ্কারি মামলায় নতুন মোড়। প্রতারণা ও আর্থিক তছরুপের এই বহুচর্চিত মামলায় এবার আদালতের নজরে এল টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য গঠিত এডিসি (Asset Disposal Committee)-এর কার্যকলাপ। অভিযোগ, যে কমিটিকে আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা উল্টে হোটেল ব্যবসা চালাচ্ছে এবং টাকা ফেরতের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করছে না।
শুক্রবার, বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ও বিচারপতি ঋতব্রত মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানায় যে, রোজভ্যালি কাণ্ডে তদন্তে গাফিলতির প্রমাণ মিলছে। তারা ইডি-র কাছ থেকে সমস্ত নথি সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে সিবিআই-কে আগামী শুক্রবার আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে, যাতে বোঝা যায়, মূল মামলার তদন্ত কতদূর এগিয়েছে।
বিচারপতিরা আরও জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ লক্ষ অভিযোগ জমা পড়েছে, যেখানে অন্তত এক কোটি মানুষের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল। এদিকে ৫৩১ কোটি টাকা হাতে থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৭৪ হাজার আমানতকারীকে টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই প্রশ্নেই বিস্ময় প্রকাশ করেছে আদালত—”টাকা হাতে থাকা সত্ত্বেও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না কেন?”
এই মামলার শুরু ২০১৫ সালে, যখন রোজভ্যালির বিরুদ্ধে প্রচুর সংখ্যক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তারপরই এডিসি কমিটি গঠন করা হয়, যাতে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া যায়। কিন্তু এখন সেই কমিটির বিরুদ্ধেই উঠছে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ।
আদালতের মতে, এই দুর্নীতির গভীরে পৌঁছতে সিবিআই-এর তৎপর তদন্ত প্রয়োজন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোজভ্যালির মতো সংস্থার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ ভবিষ্যতে অন্যান্য আর্থিক কেলেঙ্কারি মোকাবিলায় দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে।
এই ঘটনায় স্পষ্ট, শুধু প্রতারণাকারী সংস্থা নয়, তাদের ওপর নজরদারি করা সংস্থাগুলির দিকেও নজর দিতে হবে। নাহলে, একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ প্রতারিত হবেন, অন্যদিকে বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গা হারাবে আইন ও প্রশাসন।