সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
নিউটাউনে নাবালিকা ধর্ষণ ও খুন মামলার রায় ঘোষণায় তৈরি হল নজির। বারাসাতের বিশেষ পকসো আদালত টোটো চালক সৌমিত্র রায়কে (অন্য নাম রাজ) আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ১৩ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। ঘটনার মাত্র সাত মাসের মাথায় আদালতের রায় ঘোষণা বিচার ব্যবস্থার দ্রুততার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
কী ঘটেছিল নিউটাউনে?
২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গৌরাঙ্গনগরের বাসিন্দা কিশোরী বাড়িতে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে বেরিয়ে যায়। ফেরার পথে জগৎপুর এলাকা থেকে ধৃত সৌমিত্র রায়ের টোটোতে ওঠে সে। প্রথমে অন্য যাত্রী থাকলেও পরে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, টোটোর স্প্রিং দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছিল মেয়েটিকে।
পরের দিন সকালেই নির্যাতিতার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ ও ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে সৌমিত্রকে গ্রেফতার করা হয় মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই।
তদন্তের গতি ও আদালতের ভূমিকা
নিউটাউন থানার পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে ডেট প্যাটার্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে। মাত্র ১৯ দিনের মধ্যেই চার্জশিট জমা দেওয়া হয় আদালতে। তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, নিহত কিশোরীর শরীর থেকে পাওয়া ডিএনএ স্যাম্পল অভিযুক্ত সৌমিত্র রায়ের সঙ্গে মিলে গেছে। আদালত এই তথ্যকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে।
পকসো আইন, ধর্ষণ এবং খুনের ধারায় সৌমিত্রকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। রায়ে বলা হয়েছে, তার সাজা হবে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া
নিহত নাবালিকার পরিবারের সদস্যরা রায়ে সন্তুষ্ট হলেও আরও কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য – “এমন অপরাধের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত ফাঁসি।” যদিও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সৌমিত্র রায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারাগারেই থাকবেন।

সমাজের বার্তা
এই রায় শুধুমাত্র একটি মামলার সমাপ্তি নয়, এটি সমাজের জন্যও একটি বড় বার্তা। নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনের মতো নৃশংস অপরাধে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত প্রমাণ করেছে যে আইন ও বিচার ব্যবস্থা এখনও সক্রিয় এবং নির্যাতিতাদের পাশে রয়েছে।
Newtown rape life term মামলা শুধুমাত্র একটি অপরাধীর সাজা নয়, বরং একটি দৃষ্টান্ত। মাত্র ৭ মাসে তদন্ত সম্পূর্ণ করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ বিচার ব্যবস্থার সাফল্য। তবে নিহত পরিবারের মতে, নৃশংস অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত ফাঁসি। এই মামলা সমাজকে সতর্ক করছে—নারী ও নাবালিকার সুরক্ষায় কড়া আইন প্রয়োগই একমাত্র পথ।