সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
ফের বাংলায় কথা বলার অপরাধে বিজেপি শাসিত ওড়িশায় গণপিটুনিতে প্রাণ হারালেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক। মুর্শিদাবাদের পরিচয় শ্রমিক ওড়িশার সম্বলপুরে গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পাশাপাশি তার সঙ্গী আরো দুই পরিযায়ী শ্রমিক আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় বিজেপিকে বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। মৃত শ্রমিকের নাম জুয়েল রানা (১৯)। জুয়েল মুর্শিদাবাদ জেলার সুতির চক বাহাদুরপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের লোকজনের।
বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার সম্বলপুর জেলায়। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম জুয়েল রানা। বয়স ২১ বছর। তিনি মুর্শিদাবাদের সুতি ১ ব্লকের বাসিন্দা। আহতদের নাম আরিক শেখ ও পলাশ শেখ। তাঁরা প্রত্যেকেই মুর্শিদবাদের বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ২০ তারিখ ওড়িশার সম্বলপুরে যান জুয়েল-সহ আরও কয়েকজন যুবক। দিন মজুরের কাজ করতেন তাঁরা।
বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিট নাগাদ জুয়েল স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে যান। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন আরিক ও পলাশ। সেখানে তাঁরা কথা বলছিলেন বাংলায়। সেই সময় পাঁচজন দুষ্কৃতীর দল আসে। তারা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে চোটপাট করতে থাকে। পরে পরিচয় পত্র দেখাতে বলে।
শ্রমিকরা বৈধ পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তাঁদের বাংলাদেশি বলে গণপিটুনি দিতে থাকে বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে কোনও মতে পালিয়ে যান আরিক ও পলাশ। পালাতে পারেনি জুয়েল। তাকে ধরে বেধড়ক মারধর করতে থাকে দুষ্কৃতীরা। জুয়েল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে সেই অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীর দল।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। জুয়েলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর দেওয়া হয়েছে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের মুর্শিদাবাদের বাড়িতে। আজ, বৃহস্পতিবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে বলে জানা গিয়েছে। বাকি দুই পরিযায়ী শ্রমিক আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সম্বলপুর থানার পুলিশ। এখনও কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়।

জুয়েলের মা নাজেমা বিবি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলের অনেক স্বপ্ন ছিল। সব শেষ হয়ে গেল। ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলল।’ খবর পেয়েই মৃত যুবকের বাড়িতে গিয়েছেন সুতির তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আমরা সবরকম ভাবে এই পরিবারের পাশে আছি। এই ঘটনায় ছয় জনকে গ্রেপ্তার হয়েছে বলে শুনেছি। পরিবারকে যা সাহায্য করার আমরা করব।’
এই ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের তরফে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘পরিবারের পাশে আমরা রয়েছি। সবরকম সাহায্য করা হবে। কিন্তু যাঁর মৃত্যু হয়েছে, তিনি কি ফিরে আসবেন? জবাব দিক বিজেপি।’
রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজাম্মান বলেন, ‘এই ঘটনা বারবার ঘটছে। ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যগুলোতেই বিশেষত বাঙালি মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিকদের মারধর, হেনস্থা করা হচ্ছে। এই রাজ্যগুলির সঙ্গে সচিব পর্যায়ে কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এরকম ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের সরকার বাংলা বিরোধী। তাই এই ঘটনা ঘটছে।’