শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
‘গত কয়েক দিন ধরে বাংলার রাস্তায় কী চলছে আমরা দেখেছি৷ একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্যদিকে মানুষের অত্যাচার৷ আইনশৃঙ্খলার গলা টিপে ধরা হচ্ছে৷ যাঁদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করার কথা, তাঁরাই অন্যদের কথায় চলছেন।’ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে বাংলার আইন শৃঙ্খলা নিয়ে এমন অভিযোগ জানালেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
সূত্রের খবর, রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতিকে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, তাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ সেই রিপোর্টে তদন্ত কমিটি গঠন, রাজ্যের কিছু অংশে আধা সেনা মোতায়েনের মতো পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷
রাজ্য সরকারকে সংবিধানের কথা মনে করিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। খগেন মুর্মুর উপর আক্রমণের পর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও একজন অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করেতে পারেনি পুলিশ। তা নিয়ে নিন্দায় সরব রাজ্যপাল। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ না করে তা হলে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কী পদক্ষেপ তা পরিষ্কার করেননি তিনি।
গত সোমবার জলপাইগুড়ির বানারহাটে ত্রাণ বিলি করতে গিয়েছিল বিজেপির প্রতিনিধি দল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁদের উপর একদল লোক চড়াও হয়। মুখ ফেটে যায় মালদা উত্তরের সাংসদের। ঘটনার নিন্দা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নও তেলেন তিনি। পাল্টা আসরে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের এই বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী। দুই দলের নেতা-নেত্রীরা একে অপরকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে জখম সাংসদকে দেখতে যান হাসপাতালে। যদিও তিনি জানান, সাংসদের নাকের কাছে চোট লেগেছে। তিনি ডায়াবেটিক।
এদিকে বিজেপির তরফে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সময় পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে অভিযোগ। এরইমধ্যে আজ রাজ্যপাল সাফ জানান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশকে পদক্ষেপ করতে হবে। কারণ, আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে রয়েছে। রাজ্য সক্রিয় না হলে সংবিঘধান অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।

উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়া এলাকাগুলি ঘুরে দেখার পর এ দিনই দিল্লিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস৷ এর পরই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি পুলিশ প্রশাসনের এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন রাজ্যপাল৷ রাজ্যে ৩৫৫ অথবা ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের জন্য তিনি কোনও প্রস্তাব দিয়েছেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপাল অবশ্য জানান, এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷ রাজ্যপাল আরও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল৷ সবাই মিলেই রাজ্যের পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল৷ রাজ্যপাল বলেন, বাংলার মানুষ আরও ভাল পুলিশি ব্যবস্থা এবং প্রশাসন পাওয়ার অধিকারী৷ বাংলায় এই পরিস্থিতি চলতে পারে না৷ গুন্ডারাজ চলছে, মানুষ ভয়ে ভয়ে রয়েছেন৷ এই পরিস্থিতি চলতে পারে না৷ রাষ্ট্রপতিকে যা রিপোর্ট দেওয়ার আমি দিয়েছি৷ তা আমি প্রকাশ্যে বলব না৷ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যেরই৷