সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
তাঁর বিরুদ্ধে মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার যে অভিযোগ উঠেছে, তা ‘পরিকল্পিত কুৎসা’ বলেই মনে করছেন বাম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার তন্ময়কে তলব করেছিল বরাহনগর থানা। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর বাড়ি ফিরে সাংবাদিক বৈঠক করেন সিপিএম নেতা।
যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল রবিবারই। এবার অভিযুক্ত সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যকে পুলিশের তলব করা হল। বরানগর থানার পুলিশ সোমবার প্রবীণ নেতাকে তলব করেছে। সোমবার দুপুরে বরানগর থানায় আসেন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য। রবিবারই এক মহিলা সাংবাদিক একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আনেন। তিনি অভিযোগ আনেন, একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তিনি। সিপিএম নেতা তাঁর কোলে বসে পড়েন। অভিযোগকারিণী মহিলা সাংবাদিকের দাবি, রবিবার তিনি তন্ময় ভট্টাচার্যর বাড়িতে সাক্ষাৎকার নিতে যান। তখনই তাঁর শ্লীলতাহানি করেন ওই সিপিএম নেতা। যা নিয়ে পরে ফেসবুক লাইভে সরব হন মহিলা সাংবাদিক। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শ্লীলতাহানির ২টি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়। তারপর সোমবারই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দল সাসপেন্ড করেছে তাঁকে। দলের তরফে ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে।
কয়েকঘণ্টার মধ্যে সিপিএমের তরফে জানানো হয়, তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর বিষয়টি খতিয়ে দেখবে দলের ইন্টারন্যাল কমপ্লেন কমিটি। তারা যা সুপারিশ করবে, তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। গতকাল রাতেই দলের এই সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন তন্ময়। তিনি বলেন, “একটি মেয়ে অভিযোগ করা মানেই যে সাসপেন্ড করতে হবে, দল যদি এটা মনে করে, তাহলে ঠিক কাজ করেছে। কাল অন্য কারও বিরুদ্ধে যদি কোনও মেয়ে অভিযোগ করে, তাঁকেও সাসপেন্ড করবে। এই রুটিনে যদি দল চলে যায়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি আশা করেছিলাম, দল আমার কথা শুনবে।” ওই মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগ প্রসঙ্গে গতকাল তিনি বলেন, “চক্রান্ত, ফাঁসানো এখনই কিছু বলছি না। অভিযোগটা শুনে আমি স্তম্ভিত। একটা কুরুচিকর, পরিকল্পিত কুৎসা।”
সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই অসত্য। যে ঘটনার কথা ফেসবুক লাইভে বলা হয়েছে, তা ঘটেইনি। তন্ময় বলেন, ”ভদ্রমহিলা আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে। আমার পাশের বাড়ির এক যুবক আমায় রাতে জানিয়েছে যে, মেয়েটি হাসতে হাসতেই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন। মেয়েটি ফেসবুক লাইভে বলেছেন যে, উনি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। আমার বক্তব্য হল, যে সময়ে ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে, তার পরে মেয়েটি প্রায় ২৫ মিনিট আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এর পর আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েটির সল্টলেক যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা ছিল ওঁর। ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে আমাদের দু’জনের মধ্যেও কথা হয়েছে। আমি ওঁকে একটা প্রশ্নও সাজেস্ট করে দিয়েছিলাম। যিনি এতটা ট্রমাটাইজ় (মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত) হয়ে রয়েছেন, তাঁর পক্ষে কি এত কাজ করা সম্ভব?”

মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগ কেন ‘অসত্য’, তা ‘প্রমাণ’ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ভদ্রমহিলার ওজন ৪০ কেজির বেশি নয়, আমার ওজন ৮৩ কেজি। ৮৩ কেজি ওজনের এক পুরুষ যদি ৪০ কেজি ওজনের এক মহিলার কোলে বসে পড়েন তাহলে সেই মহিলা শারীরিকভাবে ফিট থাকে কি না আমি জানি না। এটা পরিকল্পিত কুৎসা।”