সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
‘আমি ৩১ তারিখ নিজে দিল্লি যাব। নির্বাচন কমিশনে দেখা করব। কাদের নাম বাদ গেল জবাব চাইব।’ এভাবেই শনিবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সময়সীমা বেঁধে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলার ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই এর তীব্র বিরোধিতা করে এসেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই এসআইআর প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে বাংলার প্রায় ৫৮ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে বলে জানা গিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সূত্রে। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে হিয়ারিং বা শুনানি পর্ব। বাংলার আরো অন্তত এক কোটি ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে বলে কমিশন সূত্রে পাওয়া খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরেই আজ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন অভিষেক।
দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, ‘কমিশনের কাছে আমাদের পাঁচটা প্রশ্ন ছিল। আজ এক মাস অতিক্রান্ত। এখনও একটাও প্রশ্নের সদুত্তর পাইনি। যে দিন বৈঠক হয়েছিল, কমিশনের বন্ধুরা মিডিয়াকে খবর খাইয়েছিল, আর বলেছিল প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমি শোনার পর এক্স হ্যান্ডেলে টুইট করি। বলি যে সেটা প্রকাশ্যে আনুন। আজ প্রায় একমাস হয়েছে জ্ঞানেশবাবু ভ্যানিশবাবুর থেকে উত্তর পাইনি। আমরা আশঙ্কা করছিলাম গত ২ মাসে বিএলও-রা অপরিকল্পিত এসআইআর এর জন্য প্রাণ গিয়েছে। এই বিএলও-দের কমিশন নিয়োগ করেছেন। সাধারণ মানুষ এসআইআর ও এনআরসি-র আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন। বিএলওদের ৫ জনের মৃত্যু হয়েছেন। ২৯ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। এরা সকলেই বলছেন এসআইআর চাপ নিতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছে। বাংলাকে টার্গেট করা হয়েছে। এর মানুষের মৌলিক অধিকার কাড়তে চাইছে। সরকার ভোটার বেছে নিচ্ছে। তৃণমূল একমাত্র দল মানুষকে নিয়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে।’
রাজনৈতিক কারণে বিজেপি এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশন বাংলাতে টার্গেট করেছে বলে অভিষেকের অভিযোগ, ‘খসড়ায় ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার বাদ গেছে । যে সব রাজ্যে এসআইআর হচ্ছে,বাংলার তুলনায় তামিলনাড়ু জনসংখ্যার তুলনায় বাদ যাওয়ার শতাংশ ১২.৫৭ পার্সেন্ট। গুজরাটে জনসংখ্যার তুলনায় বাদের সংখ্যা ৯.৯৫ পার্সেন্ট। ছত্তিশগড় জনসংখ্যার তুলনায় ৮.৭৬ পার্সেন্ট। কেরালা ৬.৬৫ পার্সেন্ট। পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫ লক্ষ। শতাংশের তুলনায় ৫.৭৯ পার্সেন্ট ভোটার বাদ গেছে। সব থেকে কম ভোটার বাংলায় বাদ গেছে। কিন্তু তাও জোর জবরদস্তি এসআইআর করেছে । বিজেপি দাবি করেছে এক কোটি অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। প্রথম প্রশ্ন, এই লক্ষে এসআইআর হয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা, তাহলে ৫৮ লক্ষের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি আর কতজন রোহিঙ্গা সেই তথ্য প্রকাশ করতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্ন, অরুণাচল, মিজোরাম, মেঘালয়, ত্রিপুরায় এসআইআর হল না কেন? কারণ নির্বাচন কমিশন আপনার মূল লক্ষ্য বাংলাবাসীকে হেনস্থা করা। তৃতীয় প্রশ্ন, যাঁরা বলছে অনুপ্রবেশকারীদের আতুড়ঘর বাংলায় তাদের চিঠি দিল না কেন কমিশন? চতুর্থ প্রশ্ন-সব থেকে কম ডিলিশন বাংলায় অথচ মাইক্রো অবজারভার এখানে। সব থেকে বেশি বাদ গেছে উত্তরপ্রদেশে। তাহলে ওখানে তো নয় কেন? নতুন নতুন রোজ নিয়ম চালু করছে বাংলার উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যা ১৫ কোটি। বাদ ৪ কোটি। সেখানে মাইক্রো অবজারভার নয় কেন? বাংলায় দুর্নীতির জন্য টাকা বন্ধ। উত্তরপ্রদেশেও একই দুর্নীতি হয়েছে। ওইখানে বন্ধ হল না কেন?’

ভোটারদের ম্যাপিং নিয়ে ও নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপে নিরপেক্ষতার অভাবের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ম্যাপিং নিয়েও আপনারা আতঙ্ক তৈরি করেছিলেন। পরে দেখা গেল ৮৯ পার্সেন্ট ম্যাপিং হয়েছে। আপনারা ভুল তথ্যের জন্য কেন বাংলার মানুষের কাছে কেন ক্ষমা চাইবে না? লজিক্যাল ডিসক্রিপ্যান্সি নিয়ে খসড়া তালিকা বের করে একই দিনে নির্বাচন কমিশন বলে দিল এক কোটি লজিক্যাল ডিসক্রিপ্যান্সি রয়েছে। কোন জাদু বলে কমিশন ৭ কোটি ডেটা যাচাই করে বলে দিল ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ডিসক্রিপ্যান্সি রয়েছে? সব রাজ্যে সময় বাড়ানো হল, অথচ বাংলায় কোন জাদুকাঠির বলে কমিশন ৭ কোটি ডেটা যাচাই করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে একই দিনে বলে দিল বাংলার ১ কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষের ডিসক্রিপ্যান্সি রয়েছে। এদের নাম প্রকাশ করুন। আমি ৩১ তারিখ নিজে দিল্লি যাব। নির্বাচন কমিশনে দেখা করব। কাদের নাম বাদ গেল জবাব চাইব। লিস্ট চাইব।’