সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
কলকাতা শহরের রাস্তায় ট্রামলাইন রক্ষা করার কথা বলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এবার সেই হেরিটেজ রক্ষাকে নিয়ে রাজ্যকে কার্যত ভর্ৎসনা করলেন প্রধান বিচারপতি। মুর্শিদাবাদে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সম্পত্তি নদীর জলে তলিয়ে যাচ্ছে, অথচ কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই!
এমনই অভিযোগে একটি মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। আজ, বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালত।
আবেদনকারীর দাবি, মুর্শিদাবাদে সিরাজ-উদ-দৌলার সম্পত্তি ভাগিরথীর গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো রক্ষা করার কোনও উদ্যোগ রাজ্য সরকারের নেই। সরকারি আইনজীবী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সম্পত্তি প্রসঙ্গে বলেন, “ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৮ সালে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সম্পত্তি নষ্ট করে ফেলেছিল। মাত্র ৯ বিঘা জমি ছিল। তাও ভাগিরথীর ভাঙনে চলে যাচ্ছে। আমাকে এই বিষয়ে আরও সময় দেওয়া হোক।”
মুর্শিদাবাদে সিরাজের সেই শেষ স্মৃতি রক্ষা করার কথা বললেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। রাজ্যকে তিনি বলেন, “যেটুকু ইতিহাস আছে, সেটা রক্ষা না করলে ৯ বিঘাও থাকবে না।” এই প্রসঙ্গে কন্যাকুমারীর উদাহরণ দেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, “দেখেছেন স্বামী বিবেকানন্দ রককে কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে? সেখানে ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে।”

হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এদিন রাজ্যের হেরিটেজ কমিশনকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, কমিশনের কোনও উদ্যোগ নেই। নিষ্ক্রিয় রয়েছে কমিশন। রাইটার্স বিল্ডিং নিয়েই বা কী করা হচ্ছে, তাও জানতে চায় হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “হেরিটেজের জায়গায় বড় বড় হাইরাইজ বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। পুরনো ইতিহাস রক্ষার পরিবর্তে তা ভেঙে ফেলা হচ্ছে।” রাজ্যকে আদালতের বার্তা, ‘যে কোনও কিছু ভেঙে ফেলা খুব সহজ। ৪৮ ঘন্টায় করে ফেলতে পারবেন। কিন্তু ফেরাতে পারবেন না।’

সিরাজের ওই সম্পত্তি নিয়ে রাজ্যকে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাদের অবস্থান জানাতে হবে আদালতে। পাশাপাশি আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।