সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
জীবনে সাফল্যের জন্য শুধুমাত্র পড়াশোনা বা বড় চাকরি নয়, প্রথমেই প্রয়োজন স্পোর্টসম্যানশিপ স্পিরিট। তাহলেই সাফল্য অধরা থাকবেনা কোন ক্ষেত্রে। এমন অনুপ্রেরণার বার্তাই উঠে এলো সোনারপুরের প্রথম সারির ইংরেজি মাধ্যম স্কুল জ্যোতির্ময় পাবলিক স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে।
সোনারপুরের জ্যোতির্ময় পাবলিক স্কুলে অত্যন্ত উৎসাহ, উদ্দীপনা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার গুরুত্ব যে একটি শিশুর সার্বিক বিকাশে কতটা অপরিহার্য, এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি মুহূর্তে তারই প্রতিফলন দেখা গেল।

এই বিশেষ দিনে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটির মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন বাংলার প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার পাপিয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জ্যোতির্ময় পাবলিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. পার্থসারথি গাঙ্গুলি।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশজুড়ে সিবিএসই (CBSE school in Kolkata Sonarpur) মাধ্যম স্কুলগুলির প্রিন্সিপালদের মধ্যে একাধিকবার সেরার শিরোপা অর্জনকারী খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ জ্যোতির্ময় পাবলিক স্কুলের প্রিন্সিপাল সুশান্ত দাস এবং সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করা ক্যারাটেকার শিহান প্রকাশ থাপা।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জ্যোতির্ময় পাবলিক স্কুলের ছাত্রীদের একটি অসাধারণ, সময়োপযোগী ক্রীড়া-নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে।
এই পরিবেশনার মাধ্যমে জ্যোতির্ময় পাবলিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত সমস্ত অভিভাবক অভিভাবিকা এবং দর্শকদের সামনে তুলে ধরে, সমাজে এখনও প্রচলিত সেই ভুল ধারণা, যেখানে মনে করা হয় খেলাধুলায় মেয়েরা তেমন কিছু করতে পারে না। ছাত্রীদের উপস্থাপনায় দেখানো হয় কীভাবে সেই ধারণাকে ভেঙে দিয়ে হরমনপ্রীত কৌর, স্মৃতি মান্ধানা-সহ ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জোরে সম্প্রতি ভারত মহিলা আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ জয় করেছে। এই নৃত্যনাট্য দর্শকদের আবেগতাড়িত করে তোলে এবং করতালিতে ভরে ওঠে গোটা মাঠ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জ্যোতির্ময় পাবলিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. পার্থসারথি গাঙ্গুলি বলেন, “ছাত্রজীবন থেকেই আমাদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে—জীবনের সব ক্ষেত্রে সবাই প্রথম হতে পারে না। স্কুলে যে ফার্স্ট হয়, সে যে জীবনের সব ক্ষেত্রেই ফার্স্ট হবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু খেলাধুলা এমন একটি মাধ্যম, যা আমাদের জীবনের জন্য প্রকৃত শিক্ষা দেয়। খেলাধুলা শেখায় কীভাবে জয় ও পরাজয়—দুটোকেই সমানভাবে গ্রহণ করে স্পোর্টসম্যানশিপ স্পিরিট নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। এই মানসিকতাই ভবিষ্যতে জীবনের লড়াইয়ে আমাদের প্রকৃত শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।”
ড. গাঙ্গুলির বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, খেলাধুলা শুধুমাত্র শরীরচর্চা নয়, বরং চরিত্র গঠনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
এরপর বক্তব্য রাখেন বাংলার প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার পাপিয়া সুলতানা। নিজের জীবনসংগ্রাম ও অভিজ্ঞতার কথা ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি আজ আইপিএস অফিসার হতে পেরেছি, তার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে আমার ছোটবেলার খেলাধুলার অভ্যাস। আইপিএস ট্রেনিংয়ের সময় আমি সেরা স্বীকৃতি পেয়েছিলাম, তার অন্যতম কারণ ছিল শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তা—যা আমি খেলাধুলার মাধ্যমেই অর্জন করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “সাফল্যের মানে শুধু পুরস্কার জেতা নয়। সাফল্য তখনই, যখন কেউ দৌড়াতে গিয়ে পড়ে গেলেও আবার উঠে দাঁড়ায় এবং আরও জোরে দৌড়াতে শুরু করে। পরাজয়, হতাশা বা ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে আরও দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে লড়াইয়ে ফিরে আসাটাই প্রকৃত সাফল্য।”
পাপিয়া সুলতানার অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ও আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করে। তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, খেলাধুলা কেবল মাঠেই নয়, জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় জয়ী হওয়ার শক্তি জোগায়।

সার্বিকভাবে বলতে গেলে, সোনারপুরের জ্যোতির্ময় পাবলিক স্কুলের এই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং ছাত্রছাত্রীদের জীবনে শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস, সহনশীলতা ও নেতৃত্বগুণ গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হয়ে রইল।