সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
নিউটাউনে প্রস্তাবিত দুর্গা অঙ্গন ঘিরে বড় আপডেট। বদলে গেল এই গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রকল্পের স্থান। ইকো পার্কের উল্টো দিকে নয়, এবার অ্যাকশন এরিয়া–১-এর নিউটাউন বাস টার্মিনাস সংলগ্ন জমিতেই গড়ে উঠতে চলেছে দুর্গা অঙ্গন। সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে আনুষ্ঠানিক শিলান্যাসকে কেন্দ্র করে এখন প্রস্তুতি তুঙ্গে।
দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের পর নিউটাউনে দুর্গা অঙ্গন তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অনুযায়ী হিডকোর আধিকারিকরা প্রথমে ইকো পার্কের কাছাকাছি একটি জমি চিহ্নিত করেছিলেন, যেখানে রামকৃষ্ণ মিশনের জমির পাশেই দুর্গা অঙ্গন গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। চলতি মাসেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশও দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে কিছু প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক কারণে সেই পূর্বনির্ধারিত জায়গায় দুর্গা অঙ্গন তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে নতুন করে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে অ্যাকশন এরিয়া–১-এর নিউটাউন বাস টার্মিনাসের পাশে। ইতিমধ্যেই সেখানে হিডকোর পক্ষ থেকে দুর্গা অঙ্গন প্রকল্পের বোর্ড লাগানো হয়েছে। শিলান্যাস অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ।
এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে আমন্ত্রণপত্রও ছাপা হয়ে গিয়েছে। আমন্ত্রণপত্রে যে নকশা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে বাংলার দুর্গাপুজোর সাবেকি ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যের এক অনন্য মেলবন্ধন তুলে ধরা হয়েছে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং বাংলার সংস্কৃতি, শিল্প ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবেই গড়ে তোলা হচ্ছে দুর্গা অঙ্গন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বাংলার দুর্গাপুজোকে যেভাবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন, তারই স্বীকৃতি হিসেবে ইউনেস্কো বাংলার দুর্গাপুজোকে ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলে দুর্গাপুজো কেন্দ্রিক শিল্পী, কারিগর, পর্যটন ব্যবসা এবং ছোট ব্যবসায়ীদের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে উপকৃত হয়েছে রাজ্যের অর্থনীতি।
চলতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের নিরিখে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলা। দুর্গা অঙ্গন সেই পর্যটন মানচিত্রকে আরও শক্তিশালী করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছরের ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে দুর্গা অঙ্গন নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অগাস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্য মন্ত্রিসভা সেই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয়। এরপর আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই শিলান্যাসের দিন ঘোষণা করেন। জানান, ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টেয় এই অনুষ্ঠান হবে, যার আয়োজক হিডকো।

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতিকে সম্মান জানিয়েই বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি হবে এই দুর্গা অঙ্গন। জগন্নাথ মন্দিরের মতোই এটি নিউটাউনের এক নতুন সাংস্কৃতিক ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠবে—এমনটাই প্রত্যাশা।