ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী, বাংলাদেশ।:
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রাজশাহীর একটি আদালত কোরআনের হাফেজ মুকিতকে দশ বছরের কারাদন্ড ও দশ লাখ টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন। মুকিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি ফেসবুকে ‘আওয়ামী লীগ’ শব্দ বিকৃত করে আওয়ামী লীগ অর্থ অন্ধকারের দল বলে পোস্ট দিয়েছিলেন।
২০১৭ সালের ২৭ মে, আব্দুল মুকিত রাজুর বয়স তখন ছিলো ১৭ বছর। ওইদিন ‘আওয়ামী লীগ’ শব্দ নিয়ে বাবা-ছেলের কথোপকথন সংবলিত কৌতুক ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযোগ করেন দলটির স্থানীয় নেতা সাইদুর রহমান বাদল।
এ অভিযোগে পরদিন আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় রাজশাহীর পবা থানায় মামলা করা হয়। এই মামলায় ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি মুকিতকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. জিয়াউর রহমান।
মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান মুকিত। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। কিন্তু ২০২২ সালে রায় হওয়া পর থেকে এখনো তিনি কারাগারে আছেন। মুকিতের আইনজীবী জানান, ফেসবুকের একটি স্ক্রিনশটের আলোকে তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। অথচ ওই স্ক্রিনশটটি যে মুকিত দিয়েছিলেন, সেটি তখন প্রমাণিত হয়নি।
জানা গেছে, মুকিত কোরআনের হাফেজ। জেলে অবস্থানকালে সেখান থেকে পরীক্ষা দিয়ে তিনি পাস করেছেন ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর)। এরই মধ্যে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের আইসিটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন। তবে মুকিতের জামিন না হওয়ায় দিনমজুর বাবা আক্ষেপ করেন। মুকিত রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর গ্রামের মো. রিয়াজুল ইসলামের ছেলে। বাবা-মায়ের পাঁচ মেয়ে ও একমাত্র ছেলে সন্তান মুকিত।
মুকিতের আইনজীবী মো. মিজানুল ইসলাম বলেন ‘আওয়ামী লীগ একটি সংগঠন। আর মানহানি মামলা হয় কোনো ব্যক্তির মানহানি কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করলে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে।
কিন্তু পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে মামলা হয়েছিল সেটি রাষ্ট্রদ্রোহেরও কোনো বিষয় ছিলোনা আইন অনুযায়ি। এ ছাড়া পোস্টটি অবশ্যই বাকস্বাধীনতার মধ্যেই পড়ে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ফেসবুকের একটি স্ক্রিনশট নিয়ে মামলা হয়েছিল। অথচ এমন কোনো পোস্টই তিনি ফেসবুকে দেননি। কেননা, আসামির মোবাইল জব্দ কিংবা ফরেনসিক টেস্টও সেই সময় করা হয়নি ।
এটি এডিট কি না তাও প্রমাণ করা হয়নি। এ ছাড়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মোবাইল নম্বরটিও যাচাই-বাছাই করা হয়নি। সুতরাং ফেসবুকে পোস্টটি মুকিতের নয়।
অথচ তিনি মিথ্যা মামলায় সাজাভোগ করছেন দীর্ঘ তিন বছর ধরে । ২০১৭ সালের ২৭ মের যে স্ক্রিনশট নিয়ে মামলাটি হয়েছিল, তখন মুকিতের বয়স ছিল ১৭ বছর। সাজার সময় তার বয়সও বিবেচনা করা হয়নি।তিনি আরও বলেন, ‘মুকিতের ১০ বছরের সাজা হওয়ার পর এই মামলা নিয়ে ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল দেশ জুড়ে।
মুকিতের মা আশরাফুনন্নেছা বলেন, ‘ছেলের বাবা স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে নাইটগার্ডের কাজ করেন। আমার পাঁচ মেয়ে ও একমাত্র ছেলে সন্তান মুকিত। অনেক আশা ছিল, ছেলে পড়ালেখা করে কিছু করবে। তার বৃদ্ধ দিনমজুর বাবার কষ্টটা একটু দূর হবে। কিন্তু ফ্যাসিবাদী সরকারের মিথ্যা মামলায় একমাত্র ছেলের ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়। ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়েছে দেশ থেকে। তবে আমার ছেলে এখনোও অন্যায়ভাবে জেলে। মিথ্যা মামলা থেকে আমার ছেলে যেন দ্রæত মুক্তি পায়, তার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে তিনি অনুরোধ জানান ।
মামলার বাদি ও আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ সাইদুর রহমান ওরফে বাদল পলাতক থাকায় তার স্বাক্ষাৎকার নিয়া সম্ভব হয়নি ।