শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং রাজ্যপালকে চিঠি বিজেপি সাংসদের। তৃণমূল চাইছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিতে। তাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক এমনই এক চিঠি পিএমও ও রাজ্যপালকে লিখে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন বিজেপি সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো। সেই সঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশন তুলে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
পার্থর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠিতে জ্যোতির্ময় লেখেন, “এসএসসি মামলায় মূল অভিযুক্ত, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাজ্য সরকার চালিত এসএসকেএম থেকে বেসরকারি হাসপাতালে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন উনি। অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তৃণমূল নেতাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত এসএসকেএম। সাম্প্রতিক ট্রান্সফার নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে আমার কাছে খবর এসে পৌঁছেছে যে , মামলা যখন নিষ্পত্তির মুখে, শাসকদল তৃণমূল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিতে চাইছে। চিরতরে মুখ বন্ধ করে দিতে চাইছে ওঁর। এমন গুরুতর পরিস্থিতিতে ওঁর নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে অনুরোধ জানাচ্ছি আপনাকে। ওঁর কোনও ক্ষতি হলে বিচারপ্রক্রিয়ার উপর প্রভাব পড়বে। দুর্নীতির সত্যতা জানতে পারবেন না রাজ্যের মানুষ।”
মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে ট্যাগ করে ওই পোস্ট লেখেন জ্যোতির্ময়। তাঁর কথায়, “বাংলার স্কুল সার্ভিস কমিশন দুর্নীতি একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে আর্জি জানাই, স্কুল সার্ভিস কমিশন পাকাপাকি ভাবে তুলে দিন। যোগ্য প্রার্থীদের ন্যায়বিচার দিন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিরাপত্তা দিন। তৃণমূল চিরতরে ওঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।”
পার্থর নিরাপত্তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকেও চিঠি দিয়েছেন জ্যোতির্ময়। সেই চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন তিনি। চিঠিতে জ্যোতির্ময় লেখেন, “বরাবর চাকরিপ্রার্থীদের স্বার্থ বিরোধী কাজ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। বেআইনি ভাবে নিযুক্তদের সরিয়ে যোগ্যদের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে হয় তারা অনিচ্ছুক, নয়ত বা অসমর্থ।” এর দু’টি কারণও উল্লেখ করে জ্যোতির্ময় লিখেছেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। অযোগ্যদের আড়াল করা হচ্ছে, যার মূল্য চোকাচ্ছেন যোগ্যরা। এবং কমিশন একেবারে অযোগ্য, তাদের অস্তিত্ব অর্থহীন।
জ্যোতির্ময় আরও লেখেন, “স্কুল সার্ভিস কমিশন একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান, শুধুমাত্র বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলেই নয়, বাম জমানা থেকেই। সিপিএম-এর তদানীন্তন বিধায়ক, যাঁরা এখন তৃণমূলে, তাঁরা প্রকাশ্যে সেই সময় বেআইনি নিয়োগের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ রাজ্য সরকাররে মন্ত্রীও। দুর্নীতির শিকড় এত গভীরে, তা নিরাময় করা সম্ভব নয়।”
স্কুল সার্ভিস কমিশন তুলে দিয়ে, নতুন বোর্ড গঠনের পরামর্শও দেন জ্যোতির্ময়। তাঁর দাবি, “দুর্নীতির যে রেকর্ড রয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের, তাতে আপনাকে অনুরোধ, পাকাপাকি ভাব সংস্থা ভেঙে দিন। এর পরিবর্তে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করুন, যাতে নতুন, স্বচ্ছ নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া ন্যায্য প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন হয়।”
বিজেপি সাংসদ এর এমন বিস্ফোরক অভিযোগের প্রেক্ষিতে জ্যোতির্ময়কে তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যত অশিক্ষিত লোক হলে যা হয়, তা বলে যাচ্ছে। এসএসসি ভাঙা যায়? একজন এমনি এসব বলছেন! পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি নিরাপত্তা চেয়ে থাকেন, ওঁরা দিয়ে দিন নিরাপত্তা!”