শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
রাজ্যের বাজেটের তীব্র বিরোধিতা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। বুধবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্যের বাজেট বেকার বিরোধী বলে কটাক্ষ তাঁর। রাজ্য সরকার যে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে, তা এই বাজেটেই প্রমাণিত বলে তোপ শুভেন্দুর। বাজেটের বিরোধিতা করে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউটও করেন বিজেপি বিধায়করা।
শুভেন্দু বলেন, যে কর্মসংস্থানের কথা বলে ২০১১ তে ক্ষমতায় এসেছিলেন, ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকার যুবক যুবতীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন মমতা। এই বাজেটে একটিও কর্মসংস্থানের কথা নেই। মমতা সরকারের ১৫ তম বাজেটে বেকার যুবক যুবতীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলে সুর চড়ালেন শুভেন্দু অধিকারী।
২০২৬-এর নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট তৃণমূল সরকারের। সেই বাজেট যখন ঘোষণা করছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সেই সময় বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট বিজেপির। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা ওয়াক আউট করেন বিধানসভা থেকে। তাঁদের বক্তব্য মহার্ঘ ভাতা আরও বাড়াতে হবে।
এ দিন, চন্দ্রিমা যখন বাজেট পড়ছেন সেই সময় ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। এরপর পকেট থেকে একটি চিরকুট বের করেন প্রত্যেকে। সেই চিরকুটে লেখা ‘বেকারদের চাকরি চাই’। চিরকুটি দেখিয়ে বিধানসভার মূল ফটকে বিক্ষোভ প্রদর্শন তাঁরা। ডিএ-র পাশাপাশি বিজেপি বিধায়কদের বক্তব্য, গোটা বাজেটে কোথাও কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়নি। পে কমিশনের কোনও উল্লেখ করা হয়নি।
এ দিন, সাংবাদিকদের মুখোমুখি শুভেন্দু বলেন, “এই সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে। ছত্রে-ছত্রে প্রমাণিত। এই বাজেট বেকার বিরোধী বাজেট। ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। যে মুখ্যমন্ত্রী ২০১১ সালে মঞ্চে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই বাজেটে একটিও কর্মসংস্থানের কথা নেই। এই বাজেট উত্তরবঙ্গ-সুন্দরবন-জঙ্গলমহল বিরোধী বাজেট। এই বাজেটে সমগ্র উত্তরবঙ্গে নদী ভাঙন, চা বাগানের উন্নয়ন, চা শ্রমিকদের পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলা নেই। এই বাজেট কৃষক বিরোধী বাজেট। তাঁদের কোনও অর্থ বরাদ্দ নেই। এই বাজেটে আমাদের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির লোকজনকে নিয়ে কোনও প্রস্তাবনা নেই। এই বাজেটে কুর্মী,নমঃশূদ্রদের নিয়ে কোনও উল্লেখ নেই। মতুয়াদের জন্য একটা বাক্য খরচ হয়নি। এটা অসত্য বাজেট।”
পশ্চিমাঞ্চলের বঞ্চিত শ্রেণীদের জন্য কোনও পরিকল্পনা নেই বলে দাবি শুভেন্দুর। তাঁর কথায়, কুড়মি সম্প্রদায় বা মতুয়াদের জন্য একটা বাক্য বা শব্দও বাজেটে রাখা হয়নি। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন কোনও পরিকল্পনা বলা নেই বাজেটে। সাগরে ব্রিজ করবে বলেছে, অথচ ইনল্যান্ড ওয়াটার জোনে কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া ওই কাজ সম্ভব না বলে দাবি শুভেন্দুর।
‘২৬-এর নির্বাচনের আগে একটা প্রতিশ্রুতিও পূরণ হবে না বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। ঘাটালের মাস্টারপ্ল্যানে ৫০০ কোটি বরাদ্দ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর দাবি, ঘাটালের জমিই অধিগ্রহণ হয়নি। তাই প্রতিশ্রুতিই থেকে যাবে। শুভেন্দুর আরও দাবি, ৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা থেকে রাজ্য কীভাবে বেরিয়ে আসবে তা উল্লেখ নেই বাজেটে। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলেন অর্থ বৃদ্ধির প্রস্তাব নেই বলেও মন্তব্য বিরোধী দলনেতার।
আরজি কর থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্যের বাজেটে নারী সুরক্ষায় কোনও কথাই বলা হয়নি বলে দাবি শুভেন্দুর। তিনি বলেন, মহিলাদের জন্য একটা কথাও নেই। আইসিডিএস ও আশাকর্মীদের স্মার্টফোন দেওয়ার কথা বলেছে। অখচ স্মৃতি ইরানি মন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্র টাকা দিয়েছিল। ৩ বছর ধরে সেই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে সুদ হজম করেছে রাজ্য। এখন কেন্দ্র টাকা ফেরত চাইতেই মোবাইল দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি শুভেন্দুর।

বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু আরও বলেন, অন্যান্য রাজ্যে বৃদ্ধি হলেও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে কোনও বরাদ্দ বাড়ানো হল না। বিধবাভাতা, লোকশিল্পীদের জন্য কোনও নতুন বরাদ্দ হয়নি। ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধি নিয়েও রাজ্যকে নিশানা শুভেন্দুর। তাঁর দাবি, কেন্দ্রের সঙ্গে বিরাট ফারাক রয়েছে। নতুন পে কমিশনের কোনও প্রস্তাব নেই। এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরাট ফারাক। এই দুর্মূল্যের বাজারে কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণা করল রাজ্য।
তাঁর দাবি, এটাই তৃণমূল সরকারের শেষ বাজেট। ২৬ সালে এই বাংলায় পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রকাশ করবে বিজেপি। প্রত্যেক বাড়িতে যেখানে চাকরি নেই, একটি করে চাকরি দেবে বিজেপি।