শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“তৃণমূলের মুসলিম বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে রাস্তায় ফেলে দেব।” এভাবেই মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূলের উদ্দেশ্যে চরম হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি দাবি করেন, “আগামী ১০ মাস পর বাংলার ক্ষমতায় আসবে বিজেপি।”
শুভেন্দু অধিকারী জানান, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করবে। ক্ষমতায় এলে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড়সড় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। তাঁর এই বক্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলনেতা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে তাদের ‘সাম্প্রদায়িক সরকার’, ‘সাম্প্রদায়িক পুলিশ’ এবং ‘মুসলিম লিগ টু’ বলে সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যে হিন্দুদের উপর অন্যায়-অত্যাচার চলছে, কিন্তু প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারের পতনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “বিধানসভার ভেতরে যা হচ্ছে তা শুধু বেপরোয়া নয়, অসাংবিধানিক। এরা বাংলার হিন্দু জনগণকে উপড়ে ফেলতে চাইছে। এই ঔদ্ধত্য দিল্লিতে কেজরিওয়াল করেছিল বলে ওখানকার মানুষ আপকে উপড়ে ফেলেছে।” তিনি বলেন, “দিল্লিতে বীজেন্দ্র গুপ্ত একমাত্র বিজেপি বিধায়ক ছিলেন। কেজরিওয়াল তাঁকে বাইরে বের করে দিয়েছিলেন। তারপর দেখুন তাদের কী দশা হলো। এখন বীজেন্দ্র গুপ্ত দিল্লির স্পিকার।”
মঙ্গলবার বিজেপি বিধায়করা ধর্মীয় স্থান রক্ষার দাবিতে বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা খারিজ করে দিলে বিজেপি বিধায়করা তীব্র বিক্ষোভ দেখান। তারা ওয়েলে নেমে কাগজ ছিঁড়ে বিধানসভা কক্ষ ত্যাগ করেন।
শুভেন্দু অভিযোগ করেন, “বিধানসভায় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। স্পিকারের একটা চোখ বন্ধ থাকে।” শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, বারুইপুর, তমলুকের শ্রীরামপুর এবং বসিরহাটে একাধিক হিন্দু মন্দির ও মূর্তি ভাঙা হয়েছে। তবে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। এছাড়া, মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনারও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, এই ঘটনাগুলি প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক মনোভাবের প্রমাণ।
শুভেন্দুর কথায়, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাব। আর ওদের দলের বিধায়কদের মুসলমান সরকার জিতে আসবে তাদের চ্যাংদোলা করে ১০ মাস পরে এই রাস্তায় ফেলব!”
অন্যদিকে, সোমবারই দল বদলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দলবদলু বিধায়কদের উদ্দেশেই বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ভিতরে তো আমরা ৭০। যখন ভোট হয়, উঠে পালিয়ে যায়! মুখ্যমন্ত্রী বলে, মুকুল (রায়) ও তো বিজেপিতে আছে, স্পিকার বলেন, সুমন কাঞ্জিলাল-ও তো বিজেপিতে আছে!”
এরপরই দলবদলু বিধায়কদের উদ্দেশে শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, “যদি বাপের বেটা বা বাপের বেটি হোন, বুকের পাটা থাকলে বিধানসভার ভিতরে দাঁড়িয়ে বলুন, আমি তৃণমূল! বাইরে বলবে তৃণমূল, আর ভিতরে বিজেপি!”