সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“খুন হিংসার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা রামকৃষ্ণের ধর্মে বিশ্বাসী। যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে মানুষ।” নাম না করে এভাবেই বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ এনে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য সাথীর মতো প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন। সরকারি একাধিক প্রকল্পের সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন। ফলে আগামী দিনে যে তাঁরা ভোট বাক্সে জবাব দেবেন সেই বিষয়ই তুলে ধরেন তিনি। এরপর বলতে গিয়ে তিনি এও বলেন,”ফুটবল খেলুন। ক্রিকেট খেলুন। দুষ্টুমির খেলা খেলবেন না। সুপ্রিম কোর্ট ওবিসি নিয়ে গত কাল একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। খারাপ কিছু বলেনি। এই সমস্যা মিটে গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ মিলিয়ে প্রায় ২-৩ লক্ষ নিয়োগ হবে।” পাশাপাশি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বার বার বিরোধীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সেটাকে আটকানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ”আমার সঙ্গে শত্রুতা করে নিয়োগ আটকাবেন না।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি স্বাস্থ্যে আজ বাংলা দেশের সেরা।”
কেন একথা বলছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, “টাকা তো আকাশ থেকে পড়ে না। কেন্দ্র তো এক টাকাও দেয় না। তা সত্ত্বেও সব স্তরের চিকিৎসকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। ১৪ হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ৪৩টা মাল্টি সুপার হাসপাতাল তৈরি করেছি। স্বাস্থ্যের কতগুলো প্যারামিটার থাকা দরকার। আমি যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন আমি দেখতাম হাসপাতালে ঢোকার গেটগুলো ছোটো ছোটো। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইঁদুর বিড়াল ঘুরে বেড়াত। আজকেও হয়তো কিছু কিছু জায়গায় সেটা হয়, তবে এখন আর সব জায়গায় হয় না।” মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, যার টাকা আছে সে তামিলনাড়ু যেতে পারে। আর বাংলায় বিনা পয়সায় চিকিৎসা করা হয়। এমনকি বাইরের লোকেরাও এখানে এসে চিকিৎসা করায়। রাজ্যের ৯ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর সেবা পেয়েছেন। তাছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ১ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর সেবা পেয়েছে। বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানান, রাজ্যে দুটি ক্যান্সার সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। একটা এসএসকেএম হাসপাতালে অন্যটা শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে।
আরজি কর প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরাও চাই আরজি করের মেয়েটি বিচার পাক।” এ প্রসঙ্গে বিরোধীদের কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগে নিজেকে সম্মান জানাতে শিখুন, সম্মান করতে শিখুন। বাংলাকে অসম্মান করবেন না।”
অন্যদিকে, বাংলায় শিল্পস্থাপনের জন্য শিল্পপতিদের বিশেষ অনুদান দেওয়া সংক্রান্ত আইন প্রত্যাহার করে বিধানসভায় বিল পেশ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প নতুন করে শুরু করা হয়েছে। তার জন্য টাকা লাগছে।সিপিএম আমলে কেউ নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। এখন রাজ্যে বিনিয়োগ আসছে। বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প নতুন করে শুরু করা হয়েছে। তার জন্য টাকা লাগছে। কোনটা আমরা রাখব, কোনটা রাখব না, সেটা দেখতে হবে।”
সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে একটা নতুন প্রকল্প নিয়ে আসবে। সেই জন্যই এই ইনসেনটিভ আপাতত রিপিল করা হল। আসলে ২০ বছর আগে যা ছিল আর এখন যেটা আছে, তার মধ্যে অনেক তফাত। আমাদের নতুন করে উদ্ভাবন করতে হচ্ছে। তাই এই বিল আনা হল। সবাইকে সহযোগিতার অনুরোধ করছি।”