সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
ওয়াকফ বিল সংসদে পাস হওয়ার পর থেকেই মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর সামনে এসেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক ও পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। এর মাঝে এই রাত্রি বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে ছবির কোলার প্রকাশ করে দাবি করেছেন বাংলায় হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ অশান্তি তৈরি করে। কিন্তু তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষ প্রত্যেকটি ছবি ধরে ধরে প্রমাণ করে দেন এই ছবিগুলি বাংলার নয় বরং দেশের অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের সাম্প্রদায়িক অশান্তির ছবি।
তিনি বলেন, “বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব ছবি ছড়াচ্ছে, তার অধিকাংশই অন্য রাজ্যের। একটি ছবি এনআরসি আন্দোলনের সময় লখনৌয়ের, আরেকটি জলন্ধরের, যেখানে একটি বাড়িতে আগুন লেগেছিল। আরও কিছু ছবি ম্যাঙ্গালোর, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ ও অসমের। অথচ সেগুলিকেই মুর্শিদাবাদের ঘটনা বলে চালানো হচ্ছে। এইভাবে বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।”
একই সুরে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, “মুর্শিদাবাদের হিংসাত্মক ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তবে রাজ্য সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, যে কেউ আইন হাতে তুলে নিলে কড়া শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে— সে যেকোনও ধর্মেরই হোক। কিন্তু বিজেপি এখন ধর্মীয় বিভাজন ও প্ররোচনার রাজনীতি করছে। তারা সামাজিক মাধ্যমে ভুয়ো ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে বাংলার পরিস্থিতিকে বিকৃতভাবে তুলে ধরছে।”
এর পাশাপাশি সাংবাদিক বৈঠক করে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলেন কুণাল। তিনি বলেন, “বিজেপি-র পাতা ফাঁদে পা দেওয়া হচ্ছে। এটা করবেন না। আমাদের কাছা মারাত্মক সব অভিযোগ আসছে। এই সব অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে, যথাযথ তদন্তের অনুরোধ করছি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।”
বাংলাকে বদনাম করতেই মুর্শিদাবাদে গন্ডগোল করানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কুণাল। তিনি বলেন, “যে জায়গাগুলিতে হিংসাত্মক ঘটনা কিছু ঘটেছে, সেখান থেকে অভিযোগ আসছে যে, বিএসএফ-এর একাংশের সহযোগিতায় সীমান্ত থেকে কিছু আপত্তিকর হামলাকারীকে ঢুকিয়ে বাংলাকে বদনাম করার জন্য, ইস্যু করার জন্য, প্ররোচনা দেওয়ার জন্য এই গন্ডগোল করানো হয়েছে। যে মুখগুলো গন্ডগোল করেছে, তাদের মূল পান্ডাদের এলাকার মানুষ চিনতে পারছেন না। যারা অশান্তি করেছে নিশ্চয়ই পুলিশ তাদের মতো করে ধরছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু মাস্টারমাইন্ড যারা, অভিযোগ আসছে যে, কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের অংশ, কেন্দ্রের কোনও কোনও এজেন্সির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বা কেন্দ্রের কোনও কোনও এজেন্সির পরিচালনায়, একটা গোপন ব্লুপ্রিন্টের মাধ্যমে, বিএসএফ-এর একাংশকে কাজে লাগিয়ে…দুষ্কৃতী, হামলাবাজ, যারা এই ধরনের কাজ করে, তাদেরকে বিএসএফ-এর একাংশের সহযোগিতায় ঢুকিয়ে, গন্ডগোল করিয়ে আবারও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
যারা মারাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না, এলাকার মানুষও কেউ তাদের চিনতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন কুণাল। তাঁর কথায়, “যারা বেশি উস্কানি দিয়েছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকার মানুষ চিনতেই পারছেন না। অথচ তারাই লোক ক্ষেপিয়েছে, তারাই আগুন জ্বেলেছে, গন্ডগোলটা তৈরি করেছে। আমরা শুধু বলছি, এতে পা দেবেন না। কারণ এতে বিজেপি-র অ্যাজেন্ডা…পশ্চিমবঙ্গে গন্ডগোল হলে, পশ্চিমবঙ্গ আগুন জ্বলার ছবি দেখালে, কাদের লাভ? বিজেপি-র লাভ! আর বিজেপি-র বি টিম কংগ্রেস-সিপিএম, আর দু’একটা দল যারা ওদের সঙ্গে আছে, তাদের লাভ।”

অন্য দিকে, দক্ষিণবঙ্গে বিএসএফ-এর ডিআইজি নীলোৎপলকুমার পাণ্ডে বলেন, “আমরা ৯ কোম্পানি সেনা বাড়িয়েছি। সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমরা চাই শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছি। ঘোষপাড়ায় আমাদের বাহিনীর উপর চারদিক থেকে হামলা হয়। পেট্রোল বোমা, পাথর, লাঠি…পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল যে বলপ্রয়োগ করতে হয়। ভয় দেখাতে শূন্যে গুলি ছুড়তে হয় আমাদের।”