শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
অনেক মানুষেরই ইপিএফওতে টাকা জমা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ যোগ্য হয়েও পেনশন পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন জানাচ্ছে, লক্ষ লক্ষ পেনশন প্রাপকের টাকা ইপিএফের তহবিলে পড়ে রয়েছে। কারণ টাকা তোলার জন্য কোনও আবেদনই জমা পড়েনি।
ইপিএফের নিজস্ব সমীক্ষায় যা উঠে এসেছে তার মধ্যে তিনটে পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, যাঁরা ইপিএফে পেনশন যাওয়ার যোগ্য, তাঁদের মধ্যে মাত্র ৬৭ শতাংশ পেনশন পাচ্ছেন। অর্থাত্ ৩৩ শতাংশ মানুষ যোগ্য হয়েও পেনশন পাচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত, মূল পেনশন গ্রাহকের অবর্তমানে তাঁর স্ত্রী এমনকি নাবালক সন্তানও পেনশন পাওয়ার যোগ্য। এমনকি অনাথ সন্তানও বাবা-মায়ের অবর্তমানে পেনশন পেতে পারেন। অথচ যোগ্য হয়েও ৬৫ লক্ষ পরিবার এই পেনশনের সুবিধা পাচ্ছেন না। তৃতীয়ত, ইপিএফও সদস্যর অবর্তমানে পরিবারের তরফে পেনশন পাওয়ার যে আবেদন জমা পড়ছে, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ পদ্ধতিগত ভুলে বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
ইপিএফের তথ্য খুঁটিয়ে দেখে বোঝা গেল ডিপেডেন্টস পেনশন নিয়েই যত সমস্যা। অর্থাত্ মূল পেনশন প্রাপকের অবর্তমানে যাঁরা পেনশন পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের বড় অংশই পেনশন পাচ্ছেন না। আর এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। কমবেশি ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ। কয়েকদিন আগেই জানা গিয়েছিল ইপিএফে ন্যূনতম পেনশনের পরিমাণ মাত্র ১ হাজার টাকা, যা অবিলম্বে বাড়া দরকার। কারণ আজকের দিনে ১ হাজার টাকায় সংসার চালাতে বলা মানে, রসিকতা করা। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ইপিএফে সেটাই ঘটছে। তবে ইপিএফের সমীক্ষা দেখে মনে হল, স্রেফ না জানার কারণে কেউ যদি পেনশন থেকে বঞ্চিত হন সেটাও একইরকম দূর্ভাগ্যজনক।
ইপিএফ ও ইপিএফের পেনশন নিয়ে অনেকেরই কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। যিনি আজ চাকরি করছেন। অবসরের পর শুধু তিনিই পেনশন পাবেন, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। তিনি পেনশন তো পাবেনই। তাঁর অবর্তমানে পরিবারও পেনশন পেতে পারেন। এ জন্য কেবল সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে। প্রথমে বলে দিই আপনার যদি ৫৮ বছর বয়স হয় এবং আপনি যদি কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করে থাকেন। তাহলে আপনি ফুল পেনশন পাবেন। বয়স ৫০ পেরোলেই আগাম পেনশনের জন্যও আবেদন করা যায়। সেক্ষেত্রে আপনি ৪ শতাংশ কম টাকা পাবেন। আবার ইপিএফও-র বিধিতে Widow Pension, Child Pension আর Orphan Pension-এর সুযোগ রয়েছে। উইডো পেনশনের জন্য দাবি মঞ্জুর হলে প্রাপকের স্ত্রী আমৃত্যু পেনশন পাবেন। যদি না তিনি ফের বিয়ে করেন। প্রাপক ও তাঁর জীবনসঙ্গী দুজনেই মারা গেলে সন্তানরা অরফ্যান পেনশন পাওয়ার যোগ্য। সর্বাধিক ২ সন্তান ২৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত পেনশন পাবে। শিশুদের ক্ষেত্রে তাঁর অভিভাবক আবেদন করতে পারবেন। ইপিএফও-র Form 10D ফিল-আপ করতে হবে।
সবক্ষেত্রেই অনলাইনে আবেদন করা যাবে। কোনও গণ্ডগোল না থাকলে ভেরিফিকেশনও হয়ে যাবে অনলাইনেই।
পিএফও-র আরও একটা নিয়ম রয়েছে যা জেনে রাখা অত্যন্ত দরকার। ইপিএফও-র সদস্য নমিনি হিসাবে যাঁর নাম দেবেন, তিনিও পেনশন পাওয়ার যোগ্য। ওই সদস্যর সঙ্গে নমিনির কী সম্পর্ক, তা জানতে চাওয়ার অধিকার কারও নেই। সম্প্রতি একটি মামলার প্রেক্ষিতে হলফনামা দিয়ে একথা জানিয়েছে ইপিএফও। যাঁরা যোগ্য হয়েও পেনশন পাচ্ছেন না, আমার অনুরোধ তাঁরা ইপিএফের ওয়েবসাইট খুঁটিয়ে দেখুন। প্রয়োজনে ইপিএফও-র অফিসে গিয়ে আবেদন করুন। আপনাদের বলে রাখি, পেনশনের আবেদনের ক্ষেত্রে কোনও সময়সীমা নেই। মানে ইপিএফও-র গ্রাহক যদি ২০১০ সালে মারা গিয়ে থাকেন, তার নমিনি ২০২৪ সালে আবেদন করলেও পেনশন পাবেন। যাবতীয় শর্ত মেনে আবেদন করলেই হলো।