শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ পাত্তা না দিয়েই মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সকাল সাড়ে নটা নাগাদ শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরে বিকেলে পৌঁছে যান মালদহে।
গতকাল বাংলায় ফিরেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তারপরেই তিনি জানিয়েছিলেন শুক্রবার তিনি মুর্শিদাবাদ ও মালদার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। যদিও এর মাঝে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুরোধ করেছিলেন যে এই মুহূর্তে তিনি যেন সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে যে এলাকাগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেই সমস্ত জায়গায় যেন এখন তিনি না যান। পরিস্থিতি পুরোপুরিভাবে শান্ত হলে তাঁকে সফর করার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাঁর এই অনুরোধ রাখলেন না সিভি আনন্দ বোস।
শুক্রেই ট্রেনে করে মালদার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন তিনি। মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে জেরে রাজ্যপাল মুর্শিদাবাদ সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই সফরের কথা জানতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, “আমি রিকোয়েস্ট করব, বাইরে থেকে এখন কেউ যাবেন না। আমিও তো যেতে পারতাম। যাইনি। আমি গেলে অন্যেরাও যেতে চাইবেন। আমাদের (রাজ্য) মহিলা কমিশনের টিমও যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছি, এখনই যেতে হবে না।” এদিকে তাঁর অনুরোধ না রেখেই শুক্রবার রওনা দেন রাজ্যপাল।
হিংসা কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাকে তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, এই ধরণের ঘটনা সহ্য করা যাবে না। এই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, “যা ঘটেছে তা এমন কিছু যা কখনওই ঘটা উচিত ছিল না। বাংলার অনেক জায়গায় রাস্তায় মৃত্যু লীলা চলছে। আমাদের হিংসার ধর্মকে ধ্বংস করতে হবে এবং কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিতে হবে। বাংলায় শান্তি ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয়।” তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল পক্ষকে একত্রিত হতে হবে।
পাশাপাশি তিনি জানান, “এলাকা পরিদর্শন এবং সেখানকার মানুষের অনুভূতি ভাগ করে নেওয়ার পর, আমার অবশ্যই একটি কর্মপরিকল্পনা থাকবে। যা এটিকে একটি মিশন মোডে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ যেকোনও মূল্যে হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করা।”
মুর্শিদাবাদে হিংসার পর নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন মালদহের বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাইস্কুলের ক্যাম্পে। এদিন সকালেই মালদহে পৌঁছন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বন্দে ভারতে মালদহ টাউন স্টেশনে নামেন তাঁরা। সেখান থেকে গাড়িতে চেপে সোজা পারলালপুর হাইস্কুলের ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দেন। দুপুর নাগাদ ক্যাম্পে পৌঁছন। ক্যাম্পে থাকা ধুলিয়ানের ঘরছাড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। শোনেন ঘটনার বিবরণ। পাশাপাশি তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা ও অভাব-অভিযোগের কথাও শোনেন। ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বললেও সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সূত্রের খবর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দিল্লিতে গিয়ে কমিশনের আধিকারিকের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করবেন।
অন্যদিকে, মানবাধিকার কমিশনের এই পরিদর্শনে রাজ্যকে বদনাম করার চেষ্টা বলে মনে করছে শাসকদল তৃণমূল। কমিশনের প্রতিনিধিদের পরিদর্শন সম্পর্কে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, মুর্শিদাবাদের ঘটনায় প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রী সবরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তা সত্ত্বেও রাজ্যকে বদনাম করতেই কমিশন পাঠানো হয়েছে। এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই রয়েছে। মন্ত্রীর যুক্তি, আগে
১১ এপ্রিল ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীন সহিংসতার প্রেক্ষাপটে এই সফর। আন্দোলনের আবহে গত শুক্রবার অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, শমসেরগঞ্জ-সহ কিছু অঞ্চলে। ঘটনায় তিনজন নিহত, বেশ কয়েকজন আহত এবং ব্যাপক সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এদিকে বেশকিছু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অনেকেই ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলায় চলে গিয়েছেন। আবার অনেকে মালদহে তৈরি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছু সময়ের জন্য মুর্শিদাবাদে থাকবে বলে ঘোষণা করেছে। বলা হয়, আদালত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনের উপর নজর রাখবে। পাশাপাশি আদালত বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্যান্যদের কর্মকর্তাদের এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।