সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
এর আগে জাপানে গিয়ে পাগল কুকুরের পালনকারী বলে দেগেছিলেন পাকিস্তানকে। ৪৮ ঘণ্টার মাথায় ফের ইসলামাবাদের মুখোশ টেনে খুলে দিলেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে পাকিস্তানকে তুলোধনা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কথা মনে করালেন তিনি। প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। উদাহরণ টেনে বলেন, ভারত, পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে নিকেশ করে দিয়েছে। মনে করালেন ৯/১১ থেকে ২৬/১১ এ জঙ্গি হামলার কথা।
অভিষেকের কথায়, “সাপ, সাপই থাকে। বদলায় না।”
বহুদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদল এখন বিদেশের মাটিতে সফর করছে। পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে একের পর এক বক্তব্য রাখছেন ভারতের সাংসদরা। পাকিস্তান যে বর্বরতার সঙ্গে জঙ্গি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সেটার নানা তথ্যপ্রমাণ বিদেশের মাটিতে তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত সরকারের বিরোধী দলগুলির সাংসদরাও দেশের স্বার্থে এককাট্টা হয়ে বিদেশের মাটিতে পাকিস্তানকে তুলোধনা করছেন। যা এক নয়া নজির সৃষ্টি করছে। এবার আবার কড়া ভাষায় পাকিস্তান সম্পর্কে বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তৃণমূল সাংসদের কথায়, “ভারতের প্রত্যাঘাতে নিহত জঙ্গিদের শেষকৃত্যে যাদের দেখা গেল, তারা কেউ সামান্য পাক জওয়ান নয়। সেনা প্রধান ও সেনার নানা বিভাগের কর্তা। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসে সরাসরি মদত জোগায়, এই ঘটনার পর তা কার্যত স্পষ্ট।” অভিষেক তার বক্তব্যে আরও বলেন, “পহেলগাঁও হামলার ২৪ ঘণ্টা পর টিআরএফ হামলার দায় স্বীকার করে। এই টিআরএফ কারা? এরা হলো লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন। আর সেই লস্কর-জইশদের যখন ভারত মারল, তখন ওদেরই শেষকৃত্যে গিয়ে হাজির হলো পাক সেনাকর্তা ও প্রধানরা।”

এদিন তিনি স্পষ্ট করেন, “পাকিস্তানকে সমর্থন করা মানেই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে সমর্থন করা হবে। ২২ তারিখে পহেলগাঁও হামলা শুধু আর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জায়গায় আটকে নেই। এটা এখন গোটা বিশ্বের ইস্যু। তাই সবাইকে এই বিষয়ে ভাবতে বলেছেন তিনি। যদি আপনি ভারত ও পাকিস্তানের ইকোনমিক্সের দিকে তাকান, তাহলে স্বর্গ ও নরকের দেখা পাবেন।”
অভিষেকের বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে অভিষেক বলেন, “সিওলে কোরিয়ান থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলির সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় আমি পহেলগাঁওয়ে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার পর ভারতের নীতিগত এবং সংযত প্রতিক্রিয়ার উপর জোর দিয়েছিলাম। কয়েকদিন আমরা ধৈর্য ধরে পাকিস্তানের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু যখন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি, তখন ভারত নির্ভুল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। আমাদের বিমান হামলায় একজনও সাধারণ নাগরিকের ক্ষতি হয়নি। অথচ ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিকে নিশেষ করেছে। আর এটা সহিংসতার স্থপতিদের কাছে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে।”
বিরোধী দলের নেতা হলেও দেশের স্বার্থে যে সকলে এককাট্টা সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন বিদেশের মাটিতে। তাই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, “আমি বাংলা থেকে এসেছি। যে দেশ কোরিয়ার সঙ্গে সভ্যতার বন্ধন ভাগ করে নেয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমি, যার ‘প্রাচ্যের প্রদীপ’ কবিতাটি এখনও এই জাতির মনে গভীরভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। ভারত শান্তি, মানবতা এবং অহিংসার মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তবে কোনও ভুল ধারণা রাখা উচিত নয়-আমাদের সহনশীলতা ভীরুতা নয়।”
এখানেই শেষ নয়, বিশ্বকে এখন বেছে নিতে হবে তারা কোন পথে হাঁটবে। এই কথাটিও বিশ্বের মাটিতে তুলে ধরেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বিশ্বের কাছে এঁকে দিলেন এক দারুণ পথও। এতে ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “৯/১১ থেকে ২৬/১১ পর্যন্ত, উরি থেকে রাজৌরি, পহেলগাঁও পর্যন্ত, পাকিস্তান বারবার সন্ত্রাসবাদীদের রাষ্ট্রীয় হাতিয়ার হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে। এটি এখন শুধু ভারতের উদ্বেগের বিষয় নয়। বিশ্বকে এখন সীমারেখা টানতে হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও দ্বিধা করা যাবে না। পাকিস্তানকে সমর্থন করা মানে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা। আমাদের প্রত্যেককেই সংগঠিত ভাবে লড়াই করতে হবে। বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসকে দূর করতে হবে। আমরা কোনো রকমের যুদ্ধ চাই না। অশান্তি চাই না। কিন্তু আমাদের নম্রতাকেও দুর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না।”